দেশের ১ কোটি ১৮ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) উদ্যোক্তার ৯০ শতাংশই ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। তবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় উন্নত প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করছে খুব অল্পসংখ্যক।
কেন পিছিয়ে এসএমই খাত
এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রযুক্তি ও এআই ব্যবহারে পাঁচটি বড় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে—
প্রযুক্তিগত অজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের অভাব
উচ্চ ব্যয়
সফটওয়্যারের ভাষাগত সীমাবদ্ধতা
মফস্বলে দুর্বল ডিজিটাল অবকাঠামো
নারী উদ্যোক্তাদের প্রযুক্তি ব্যবহারে অনীহা
বিশেষজ্ঞদের মতে, গবেষণায় ব্যয় না করার প্রবণতা প্রযুক্তি ব্যবহারে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে যেখানে গবেষণা খাতে ৫ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে, এসএমই খাতে তা মাত্র ১-২ শতাংশ।
উদ্যোক্তাদের সচেতনতার ঘাটতি
এসএমই ফাউন্ডেশনের জরিপে দেখা যায়, ৮২ শতাংশ উদ্যোক্তা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন নন। ৬৬ শতাংশ উদ্যোক্তা জানেন না কীভাবে এআই, রোবোটিকস বা আইওটি ব্যবসায় কাজে লাগতে পারে।
জিডিপিতে অবদান কমছে
প্রযুক্তি ও এআই ব্যবহারে ঘাটতির কারণে এসএমই খাতে প্রতিবছর ৩-৫ শতাংশ উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বর্তমানে দেশের জিডিপিতে এ খাতের অবদান ৩০ শতাংশ হলেও প্রযুক্তি ব্যবহারে তা আরও বাড়তে পারত।
নীতিগত সহায়তার অভাব
জাতীয় এসএমই নীতিতে প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নের কথা থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। উদ্যোক্তারা জানেন না কোথায় প্রযুক্তি পাওয়া যাবে কিংবা কীভাবে শুরু করতে হবে। এছাড়া আইসিটি খাতে কর-ভ্যাট অব্যাহতির সংকোচনও অগ্রযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরিতে দাতা সংস্থার কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সেটি পাওয়া গেলে এসএমই খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান মনে করেন, “অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এসএমই খাতের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ালে অর্থনীতিতে আরও বড় ভূমিকা রাখবে।”
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মুসফিকুর রহমান জানান, উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রযুক্তি ব্যবহারে যে ভয় কাজ করে তা দূর করার চেষ্টা চলছে।
বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এম কে মুজেরী বলেন, “চীন, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও জাপান প্রযুক্তিনির্ভর এসএমই খাত দিয়েই অর্থনৈতিক উন্নয়নে এগিয়েছে। এআই ও রোবট ব্যবহার ছাড়া প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়।”
সফলতার উদাহরণ
ঢাকার হাজারীবাগে প্রযুক্তিবিহীন ওয়ার্কশপের তুলনায় প্রযুক্তিনির্ভর ওয়ার্কশপে উৎপাদনশীলতা ও মান নিয়ন্ত্রণে স্পষ্ট পার্থক্য পাওয়া গেছে। গবেষণা বলছে, যারা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তাদের বিক্রি ও সেবা বেড়েছে গড়ে ১৭ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমাদের প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে। বিশেষ করে এআই ব্যবহার করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ভালো সুযোগ রয়েছে।”
এছাড়া কিফিয়া টেকনোলজি এআই-ভিত্তিক ‘ক্রেডিট স্কোরিং পদ্ধতি’ চালু করেছে, যা নারী উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ঋণ পেতে সহায়তা করবে।
উপসংহার
দেশি-বিদেশি অভিজ্ঞতা বলছে, এসএমই খাতে প্রযুক্তি ও এআই ব্যবহারের বিকল্প নেই। উৎপাদনশীলতা, প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে হলে এ খাতকে দ্রুত প্রযুক্তিনির্ভর করতে হবে।
 
                 
                                                                                                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                