শেখ হাসিনার বয়স বাড়ছে, উত্তরসূরি নিয়ে বাড়ছে দলে অস্থিরতা

 ছবি:
ছবি:

আওয়ামী লীগের ভেতরে নীরব বিভাজন

কে হবেন শেখ হাসিনার উত্তরসূরি?

২০০৯ সাল থেকে টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলে ও সরকারে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছেন। তবে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পর দলের ভেতরে জন্ম নিয়েছে ভিন্ন মত, লবিং এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে দোটানা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার বয়স এখন প্রায় আশির কাছাকাছি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে—তার পর কে হবেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে? এই প্রশ্ন থেকেই দলে দুটি ভিন্ন উপদল তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

উপদল ১: শেখ হাসিনার অনুগত বলয়

অবস্থান: শেখ হাসিনার নেতৃত্ব যতদিন সম্ভব বজায় রাখা, আর তার পর শুধুমাত্র তার পছন্দের কাউকেই উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নেওয়া।

প্রধান মুখ:

  • ওবায়দুল কাদের (সাধারণ সম্পাদক)
  • প্রয়াত এইচ টি ইমাম (সাবেক উপদেষ্টা)
  • কয়েকজন প্রভাবশালী আমলা ও প্রযুক্তিখাতভিত্তিক নীতিনির্ধারক

উপদল ২: পরিবর্তন প্রত্যাশী গ্রুপ

অবস্থান: শেখ হাসিনার পরে নেতৃত্ব আসুক আরও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, যেখানে নতুন ও সৎ ভাবমূর্তির নেতাদের সুযোগ থাকবে।

প্রধান মুখ (অনানুষ্ঠানিক):

  • সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের একটি অংশ
  • বিতর্কিত মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীঘনিষ্ঠ কিছু নেতা
  • শেখ রেহানা ঘনিষ্ঠ একটি বলয়
  • প্রবাসে থাকা আওয়ামী লীগের একাংশ

বিভাজনের ইঙ্গিত

২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের ভেতরের এই বিভাজনের কিছু চিহ্ন দেখা যায়। একাধিক সাবেক ছাত্রনেতা আন্দোলনকারীদের প্রতি ‘সহানুভূতিশীল’ মনোভাব দেখান। তবে শেখ হাসিনার অনুগত অংশ এটিকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে ধরে নেয়।

একজন সাবেক ছাত্রলীগ সহসভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,

“আমরা দেখেছি কিছু সিনিয়র নেতা ছাত্রদের কথাও বোঝার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তখন দলের ভেতরে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হয়।”

সম্ভাব্য উত্তরসূরির তালিকা

রাজনৈতিক অঙ্গনে কয়েকটি নাম আলোচনায় আসছে—

  1. সজীব ওয়াজেদ জয় – প্রধানমন্ত্রীর ছেলে, ডিজিটাল বাংলাদেশের মুখপাত্র
  2. শেখ রেহানা – সরাসরি রাজনীতিতে নেই, তবে ব্যাকচ্যানেলে সক্রিয়
  3. ওবায়দুল কাদের – সিনিয়র, তবে শারীরিক অসুস্থতা বড় প্রশ্ন
  4. নতুন মুখ – technocrat, সামরিক ঘনিষ্ঠ, অথবা প্রবাসী আওয়ামী নেতা

একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন,

“শেখ হাসিনা জানেন কাকে কখন সামনে আনতে হবে। তার পর কে হবেন—সেটা হয়তো শেষ সময়েই স্পষ্ট হবে।”

ভেতরের খেলা, বাইরে নীরবতা

আওয়ামী লীগের ভেতরের এই দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলেন না।

কারণ—

  • ভিন্নমত মানেই ‘বিরোধী পক্ষ’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার আশঙ্কা
  • গোপন নজরদারি ও সাইবার মনিটরিং
  • দল থেকে বহিষ্কার বা পদ হারানোর ভয়
  • সরকারি সুযোগ-সুবিধা হারানোর ঝুঁকি

একজন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন,

“আমরা কিছু বলতে পারি না ভাই। এইটা এখন দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে, কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলবে না। কেবল ভেতরে ভেতরে খেলা চলছে।”

সামনে কী?

শেখ হাসিনার বয়স ও রাজনৈতিক অবস্থান নতুন প্রশ্ন তুলবে। আগামী নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের ভেতরের এই দ্বন্দ্ব আরও খোলাখুলি প্রকাশ পাবে কি না—সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এলাকার খবর

সম্পর্কিত