উমার রাযী: মুসলিম উম্মাহর প্রধান দু’টি উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। ঈদ যেমন আনন্দের, তেমনি এটি একটি ইবাদতও বটে। ঈদের দিন আমাদের ওপর বিশেষ ধরনের দুই রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব। এই নামাজ প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের চেয়ে একটু ভিন্ন। কিভাবে ঈদের এই দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়, তা তুলে ধরা হলো-
ঈদুল আজহা কি?
ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদ। ত্যাগ ও উৎসর্গের ঈদ কুরবানি। প্রতিবছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখ এ ঈদ পালিত হয়।
হজের মাসে আত্মত্যাগের এ ঈদ মুসলিম উম্মাহর সব ধরনের পশুত্বকে নির্মূল করে। কুরবানির ঈদের নামাজ সকাল সকাল আদায় করা হয়। ঈদের নামাজের পরই আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে পশু কুরবানি করতে হয়।
ঈদের নামাজ
ঈদের নামাজ দুই রাকাত। আর তা ওয়াজিব। এতে আজান-ইকামত নেই। যাদের ওপর জুমার নামাজ ওয়াজিব, তাদের ওপর ঈদের নামাজও ওয়াজিব। ঈদের নামাজ ময়দানে পড়া উত্তম। তবে মক্কাবাসীর জন্য মসজিদে হারামে উত্তম। শহরের মসজিদগুলোতেও ঈদের নামাজ জায়েজ আছে। (বুখারি: ১/১৩১, ফতোয়া শামি: ১/৫৫৫, ১/৫৫৭, আল মুহাজ্জাব: ১/৩৮৮)
ঈদের নামাজের সময়
সূর্য উদিত হয়ে এক বর্শা (অর্ধহাত) পরিমাণ উঁচু হওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত বাকি থাকে। তবে ঈদুল ফিতরের নামাজ একটু দেরিতে পড়া সুন্নত, যেন নামাজের আগেই বেশি থেকে বেশি সদকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যায়। (ফাতহুল কাদির: ২/৭৩, আল মুগনি: ২/১১৭)
নামাজের নিয়ত
ইসলামে নিয়ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সব কিছুই নিয়তের উপর নির্ভরশীল। নিয়ত আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো, মনের ইচ্ছা, সঙ্কল্প বা প্রতিজ্ঞা। এটি অন্তরের কাজ, জিহ্বার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোনো কাজের শুরুতে মনের মধ্যে যে ইচ্ছাপোষণ করা হয়, সেটাকেই নিয়ত বলা হয়। তাই মনে মনে নির্দিষ্ট করতে হবে যে, আমি এই ঈদের নামাজ কিবলামুখী হয়ে ইমামের পেছনে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সাথে আদায় করছি।
ঈদের নামাজের তাকবির ও নিয়ম
সাধারণ নামাজের চেয়ে ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির ওয়াজিব। প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমা ও ‘ছানা’র পর তিন তাকবির। দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর রুকুতে যাওয়ার আগে তিন তাকবির। এই তাকবিরগুলো বলার সময় ইমাম-মুক্তাদি সবাইকে হাত ওঠাতে হবে। তৃতীয় তাকবির ছাড়া প্রতিটি তাকবিরের পর হাত ছেড়ে দিতে হবে। কেউ যদি এই তাকবিরগুলো না পায়, তাহলে সে রুকুতে থাকা অবস্থায় আদায় করে নেবে। কারো পূর্ণ এক রাকাত ছুটে গেলে সে দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর তাকবিরগুলো আদায় করে নেবে। কেরাতের আগে আদায় করারও সুযোগ রয়েছে। নামাজ শেষে খুতবা প্রদান ইমামের জন্য সুন্নত, তা শ্রবণ করা নামাজির জন্য ওয়াজিব। (ফতোয়ায়ে শামি: ১/৫৫৯, ৫৬০)