সহযাত্রী ডেস্ক: সেমিফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলায় ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে আর্জেন্টিনা। প্রথম গোলটি অবশ্য মেসি দিলেন নিজেই। এবারও পেনাল্টিতে। এরপর দুটো গোল করলেন হুলিয়ান আলভারেজ। তার প্রথম গোলটা ছিল দর্শনীয়। প্রতিপক্ষ দলের তিন প্লেয়ারকে কাটিয়ে সোজা পৌঁছে যান গোলে। গোলরক্ষক তার গতি রোধ করতে পারেননি। দ্বিতীয় গোলের সুযোগ তৈরি করেন লিওনেল মেসি। যেভাবে তিনি বল কাটিয়ে গোলের দিকে ছুটছিলেন তাতে মনে হয়েছিল- বলটি জালে পৌঁছে দেবেন। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ানরা বাধা সৃষ্টি করতে গেলে মেসি খুব দ্রুততার সঙ্গে নিপুণ কাটব্যাক করেন আলভারেজের কাছে। এরপর আলভারেজ দ্রুত বলটি জালে পাঠিয়ে দেন। খেলার ভাগ্য অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়।
২০১৪ সালের পর আর্জেন্টিনা আরও একবার উঠে গেল বিশ্বকাপের ফাইনালে। এটি আর্জেন্টিনার ষষ্ঠ বিশ্বকাপ ফাইনাল। সেই সঙ্গে রাশিয়া বিশ্বকাপে ৩-০ গোলে হারের প্রতিশোধও নিলো দুই বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। অন্যদিকে গতবারের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়ার পথচলা এবার থেমে গেল শেষ চারেই। শেষ হয়ে গেছে বিশ্বকাপে মদরিচ অধ্যায়ও। আজ ফ্রান্স মরক্কোর সেমিফাইনালের বিজয়ীর সঙ্গে আগামী রোববার এই লুসাইল স্টেডিয়ামে শিরোপার লড়াইয়ে নামবে আর্জেন্টিনা।
২০০৬ থেকে ২০২২ পর্যন্ত পাঁচ বিশ্বকাপে ২৫ ম্যাচ খেলেন মেসি। এর আগে জার্মান সুপারস্টার লোথার ম্যাথিউস বিশ্বকাপে ২৫ ম্যাচ খেলেছিলেন। মেসি কাল তার রেকর্ডে পৌঁছে গেলেন। ফাইনালে তাকে অতিক্রম করে যাবেন এই আর্জেন্টাইন তারকা।
একইসঙ্গে বিশ্বকাপে ১১ গোল করে পূর্বসূরি গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার রেকর্ডও ভেঙে দিলেন আর্জেন্টাইন এই মহাতারকা। ১৯৯৪ থেকে ২০০২- তিন বিশ্বকাপে ১২ ম্যাচ খেলে ১০ গোল করেছিলেন বাতিস্তুতা। কোয়ার্টার-ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে একটি গোল করে তার পাশে বসেন মেসি। পরে উত্তরসূরিকে অভিনন্দন জানিয়ে বাতিস্তুতা বলেছিলেন, তিনি চান সেমিফাইনালেই তাকে ছাড়িয়ে যাক মেসি। তার সেই চাওয়া পূর্ণ করলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। কাল সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে পেনাল্টি গোলে বাতিস্তুতাকে পেছনে ফেলেন মেসি। চলতি আসরে ৬ ম্যাচে মেসির গোল হলো ৫টি। আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় কিলিয়ান এমবাপ্পের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে এখন ৩৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
শুরুতে অবশ্য আর্জেন্টিনার চেয়ে ক্রোয়েশিয়ার পায়েই বল ছিল বেশি। প্রথমার্ধে তাদের দখলে বল ছিল ৬২ শতাংশ। দারুণ সব পাসে তাদের প্লে–মেকিংগুলোও ছিল দেখার মতো। তবে আগের ম্যাচগুলোর মতো এ ম্যাচেও অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে ব্যর্থ হচ্ছিল ক্রোয়াটদের আক্রমণ। তাই পাস ও বল দখলে এগিয়ে থাকলেও নিশ্চিত গোলের সুযোগ বলতে যা বোঝায় তা বের করতে ব্যর্থ হয় ক্রোয়েশিয়া। পজেশন রেখে আক্রমণে ওঠার কৌশলেই সবসময় দেখা যায় আর্জেন্টিনাকে। একটু একটু করে গুছিয়ে ওঠা আর্জেন্টিনা ২৫তম মিনিটে ম্যাচে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগটি পায়। তবে এনজো ফার্নান্দেজের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক ডোমিনিক লিভাকোভিচ। নকআউট পর্বের প্রথম দুই ধাপে দলের জয়ের নায়ক লিভাকোভিচ সাত মিনিট পর করে ফেলেন মস্তবড় ভুল। মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা বল বক্সের মুখে বুক দিয়ে আলতো করে সামনে বাড়ান আলভারেজ। ঠিক ওই সময় ছুটে এসে তাকে ফাউল করে বসেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক। পেনাল্টির বাঁশি বাজাতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি রেফারিকে। গোলরক্ষককে দেখান হলুদ কার্ডও। বুলেট গতির স্পট কিকে ঠিকানা খুঁজে নেন মেসি। এবারের বিশ্বকাপে তার গোল হলো ৫টি। গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে আগে থেকে শীর্ষে থাকা কিলিয়ান এমবাপ্পের পাশে বসলেন তিনি। ক্যারিয়ারে মেসির মোট গোল হলো ৯৬টি। এগিয়ে গিয়ে যেন খুঁজে ফেরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় আর্জেন্টিনা। বাড়াতে থাকে চাপ। পাঁচ মিনিট পরেই মিলে যায় দ্বিতীয় গোল। মেসির পাস পেয়ে মাঝমাঠের আগে থেকে দৌড় দেন আলভারেজ। সব বাধা পেরিয়ে বক্সের মুখে অবশ্য হারাতে বসেছিলেন পজেশন, তবে প্রতিপক্ষের পায়ে লেগে ফেরা বল দারুণ এক টোকায় সামনে বাড়ান। ওখানেও দলকে বাঁচানোর সুযোগ ছিল ডিফেন্ডার সোসার সামনে; কিন্তু তার দুর্বল শটে বল লাগে আলভারেজের বুকে। এরপর ঠাণ্ডা মাথায় ডান পায়ের শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ম্যানচেস্টার সিটির ফরোয়ার্ড। ম্যাচের ৬৯তম মিনিটে আরও এক গোল করেন আলভারেজ। তবে গোলটি তার থেকে অনেক বেশি কৃতিত্ব মেসির। ডান প্রান্তে সাইড লাইনের কাছে বল ধরে ডিফেন্ডারকে ঘাড়ের কাছে নিয়ে এগিয়ে যান মেসি। পায়ের কাজ দেখাতে দেখাতে বক্সে ঢোকেন। তার পরে বল রাখেন অরক্ষিত আলভারেজের কাছে। ডান পায়ে গোল করে ব্যবধান বাড়ান আলভারেজ। আলভারেজের আগের গোলটা যদি টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা গোল হয়, মেসির এই কীর্তিটি সম্ভবত টুর্নামেন্টের সেরা অ্যাসিস্ট। এরপর আর ক্রোয়েশিয়া এই ম্যাচে ফিরতে পারে নাকি! এই জয়ে ২০১৪ সালের পর আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালের আর্জেন্টিনা।
ওদিকে খেলা শেষে মেসি মেসি চিৎকারে গোটা স্টেডিয়াম যেন নাচছিল। বাইরের পরিস্থিতিও একই। রাস্তা ব্লক হয়ে যায়। এভাবেই ফাইনালে ওঠার উৎসবে মাতে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা।