সহযাত্রী ডেস্ক: মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদী থেকে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলাম লেখক বিভুরঞ্জন সরকারের (৭১) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চর বলাকিয়া এলাকায় ভাসমান অবস্থায় স্থানীয়রা তার মরদেহ দেখতে পায়। খবর পেয়ে নৌ–পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে।
ঘটনাস্থল ও পুলিশি তথ্য
নৌ–পুলিশ জানায়, শুক্রবার বিকেলে নদীতে ভাসমান অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি আত্মহত্যার ঘটনা। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্ত শেষে জানা যাবে।
বিভুরঞ্জন সরকারের শেষ লেখা
ঘটনার আগে সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার ‘খোলা চিঠি’ শিরোনামে নিজের শেষ লেখা বিডিনিউজ২৪–এ মেইল করেছিলেন। ওই লেখায় তিনি নিজের অসুস্থতা, ছেলে–মেয়ের শিক্ষা ও কর্মজীবনে ব্যর্থতা এবং আর্থিক দৈন্যতার কথা উল্লেখ করেন।
চিঠিতে তিনি লেখেন—
“ছেলে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেও চাকরি পাচ্ছে না। সরকারি কর্মকর্তা মেয়ে উচ্চতর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। নিজের অসুস্থতা ও আর্থিক সংকট বেড়েই চলেছে।” এসব ব্যর্থতা ও হতাশা তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পিনাকী ভট্টাচার্যের ফেসবুক পোস্ট
সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যুর পর আলোচিত লেখক, গবেষক ও জনপ্রিয় অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য শুক্রবার রাতে তার ফেসবুকে দীর্ঘ একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি বিভুরঞ্জনের আত্মহত্যার কারণ বিশ্লেষণ করেন এবং রাজনৈতিক প্রসঙ্গও টেনে আনেন।
তিনি লেখেন—
“সিনিয়র সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার সুইসাইড করেছেন। পরিবারের প্রতি শোক জানাই। ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন সিপিবির নেতা। পরে আওয়ামী লীগ ও ভারতের ন্যারেটিভের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন এই প্রভাব চিরস্থায়ী হবে। কিন্তু ‘বর্ষা বিপ্লব’-এর পর তা ভেঙে পড়ে। সেই হতাশাই তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।”
পিনাকী আরও দাবি করেন, বিভুরঞ্জন সরকার মৃত্যুর আগে সবকিছু পরিকল্পিতভাবে করেন। মোবাইল ফোন বাসায় রেখে যান যাতে তাকে ট্রেস করা না যায়, এরপর মেঘনায় ঝাঁপ দেন।
তার অভিযোগ, বিভুরঞ্জন সরকার যাদের জন্য জীবনে কাজ করেছেন, তাদের কেউ শেষ সময়ে পাশে দাঁড়ায়নি। বরং তারা বিলাসী জীবনযাপনে মগ্ন ছিলেন।
রাজনৈতিক ইঙ্গিত
পোস্টে পিনাকী ভট্টাচার্য ভারতীয় গণমাধ্যমকে ইঙ্গিত করে বলেন,
“এটা নিয়ে ভারতীয় গোদি মিডিয়া প্রচারণা চালাবে— সংখ্যালঘু হিন্দু সাংবাদিককে গুম করে হত্যা করেছে বর্তমান সরকার। আশা করি বিভুরঞ্জন সরকারের পরিবার এতে সায় দেবেন না।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন—
“আপা আর ফিরবেন না, ভারতের তালুকদারিও ফিরবে না। বিপ্লব এখনো জিন্দা আছে।”
কে এই বিভুরঞ্জন সরকার?
বিভুরঞ্জন সরকার ছিলেন বাংলাদেশের একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও কলাম লেখক। দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে তিনি বিভিন্ন পত্রিকা ও গণমাধ্যমে যুক্ত ছিলেন। বামপন্থী রাজনীতি দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু হলেও পরবর্তীতে আওয়ামী রাজনীতির ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষক হিসেবেও পরিচিত হন।
বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যুতে সহকর্মী মহল ও গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে শোক নেমে এসেছে। তবে এটি নিছক আত্মহত্যা নাকি অন্য কোনো রহস্য জড়িত আছে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।