সহযাত্রী ডেস্ক: রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের কাছে গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। অনুমতি পাওয়ার পরপরই সেখানে জড়ো হতে শুরু করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গোলাপবাগ মাঠে হাজারখানেক নেতাকর্মীকে দেখা গেছে। এসময় তাদেরকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা সেখানে আসছেন।
অনুমতি পাওয়ার পরই কর্মীদের নিয়ে গোলাপবাগ মাঠে চলে এসেছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. আশরাফ উদ্দিন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মালবাহী গাড়িতে করে ঢাকায় এসেছি। অনুমতি মিলেছে জেনেই দ্রুত মাঠে চলে আসি। আমাদের মূল চাওয়া বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং তারেক রহমানকে দেশে আসার সুযোগ করে দিতে হবে। একইসঙ্গে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’
আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে শতাধিক নেতাকর্মী এসেছিলাম। তবে সমাবেশস্থলে একসঙ্গে আসতে পারিনি। পৃথক পৃথকভাবে এসেছি। অনেকবার চেকিংয়ের মুখেও পড়েছি।’
সিলেট থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় এসেছেন সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজওয়ান আহমেদ। তিনি বলেন, ‘৭ তারিখ (ডিসেম্বর) রাতেই অনেক কষ্টে ঢাকায় এসেছি। পুলিশের তল্লাশির কারণে যে বাসায় উঠেছিলাম, তা ছেড়ে দিয়ে নতুন জায়গায় যেতে হয়েছিল। দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে এত কষ্ট করে আসা।’
সমাবেশস্থলে আসা একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বেশিরভাগই ঢাকা বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। গ্রেফতার এড়াতে দু-তিনজন করে আলাদা আলাদাভাবে এসেছেন। ঢাকায় এসেও তারা পৃথকভাবে নিজ নিজ উদ্যোগে থাকার ব্যবস্থা করেন। সমাবেশের অনুমতির খবর মিলতেই দ্রুত মাঠে চলে এসেছেন।
এদিকে, নেতাকর্মীদের স্লোগানে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের আমেজ দেখা গেলেও এখনো মঞ্চ বানানোর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, দ্রুতই মঞ্চ বানানোসহ সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু হবে।
এর আগে দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। সেখানে গোলাপবাগে বিএনপিকে সমাবেশ করতে অনুমতি দেয় পুলিশ।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘গোলাপবাগে গণসমাবেশ করতে আমরা অনুমতি পেয়েছি। শনিবার বেলা ১১টার দিকে এ সমাবেশ শুরু হবে।’
এদিকে, বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশও। ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বিএনপির প্রস্তাবিত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ কর্মসূচি করে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকায় গণসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। দলটি নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চায়।
তবে পুলিশ নয়াপল্টনে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। এর বদলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলা হয় বিএনপিকে। তবে বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশে অনড় থাকে।
একপর্যায়ে বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীরা জমায়েত হলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে মকবুল হোসেন নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন মারা যান। আহত হন অনেকে। এরপর বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ।
এসময় দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীসহ গ্রেফতার করা হয় প্রায় ৪০০ নেতাকর্মীকে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে উত্তরার বাসা থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং শাহজাহানপুরের বাসা থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আটক করে পুলিশ। পরে ডিবি কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
এরপর বিএনপির গণসমাবেশ নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়। তবে শুক্রবার বিকেলে অবশেষে বিএনপি ও পুলিশ সমঝোতায় পৌঁছে। বিএনপির প্রস্তাবিত গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ।