এক্সিম ব্যাংক থেকে ৬১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (২০ আগস্ট) দুদকের উপপরিচালক মো. আল-আমিন রাজধানীর সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১–এ এজাহার দায়ের করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন।
কীভাবে আত্মসাৎ করা হলো ঋণের অর্থ
দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, ‘ফ্লামিংগো এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই বিপুল অঙ্কের ঋণ অনুমোদন করা হয়। কিন্তু প্রকৃত সুবিধাভোগী হন নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে—
-
প্রতিষ্ঠানটির কোনো বাস্তব ব্যবসা যাচাই, পরিদর্শন বা পর্যাপ্ত জামানত ছাড়াই এক্সিম ব্যাংক ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করে।
-
ঋণের অর্থ প্রকৃত ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার না হয়ে কাগুজে লেনদেন ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে নাসা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হয়।
-
ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি জানলেও ইচ্ছাকৃতভাবে সহযোগিতা করেন।
ফ্লামিংগো এন্টারপ্রাইজের কার্যক্রম
২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল মাত্র ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে এক্সিম ব্যাংকের টাওয়ার শাখায় ফ্লামিংগো এন্টারপ্রাইজের নামে হিসাব খোলা হয়। এর তিন দিন আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করা হয়, যেখানে ব্যবসা শুরুর তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয় ২০২৪ সালের ৬ এপ্রিল। প্রতিষ্ঠান ও মালিকের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয় নাসা গ্রুপের ঠিকানা।
পরবর্তীতে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ধাপে ধাপে প্রতিষ্ঠানটির নামে মোট ৬১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসব অর্থ বিভিন্ন কাগুজে বিল, ক্যাশ মেমো ও চেকের মাধ্যমে নাসা গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থানান্তর করা হয়।
ঋণ পরিশোধ হয়নি
দুদকের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘বাই মুয়াজ্জাল’ ও ‘আইবিবি’ ঋণ এখনো পরিশোধ করা হয়নি। এছাড়া ‘এমটিআর’ ঋণের অর্থ বিদেশি রপ্তানিকারকের ব্যাংকে পাঠানো হলেও নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে তা ফেরত দেওয়া হয়নি।
ব্যাংকের অবহেলা
এজাহারে বলা হয়, এক্সিম ব্যাংকের টাওয়ার শাখার কর্মকর্তারা ব্যবসার বাস্তব যাচাই, স্টক পরিদর্শন বা লাভ-ক্ষতি বিশ্লেষণ ছাড়াই ঋণ অনুমোদনের সুপারিশ করেন। আঞ্চলিক ও প্রধান কার্যালয়ও যাচাই না করেই অনুমোদন দেয় এবং পরে পরিচালনা পর্ষদ কোনো প্রশ্ন ছাড়াই তা পাস করে।
মামলার আসামি
নজরুল ইসলাম মজুমদার ছাড়াও এ মামলার আসামিদের মধ্যে আছেন—
-
ফ্লামিংগো এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. মোশারফ হোসেন
-
নাসা বেসিকস লিমিটেডের এমডি ওয়ালিদ ইবনে ইসলাম
-
মদিনা ডেটস অ্যান্ড নাটসের স্বত্বাধিকারী মোজাম্মেল হোসাইন
-
জান্নাত এন্টারপ্রাইজের মো. আবুল কালাম আজাদ
-
এমএনসি অ্যাপারেলস লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম ভূঁইয়া
-
এক্সিম ব্যাংকের ম্যানেজার (এসভিপি) মো. আশরাফুল হক
-
এভিপি আবদুল্লাহ আল মামুন
-
সাবেক ইনভেস্টমেন্ট অফিসার ও বর্তমান যমুনা ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কাদের
এছাড়াও আরও কয়েকজন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।