চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় বিগত ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পাসের হার রেকর্ড করা হয়েছে। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫৭ দশমিক ১২ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ পয়েন্ট কম।
এইচএসসি পরীক্ষার ফল আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়। এবারে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৪২ জন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৫ লাখ ৯৮ হাজার ১৬৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৩ হাজার ২১৯ জন, যা গত বছরের তুলনায় ৭৬ হাজার ৮১৪ জন কম।
ফলাফল বিশ্লেষণে চিত্র স্পষ্ট
বিভিন্ন বোর্ডের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন, যা সামগ্রিক পাসের হারে বড় প্রভাব ফেলেছে।
২০২৪ সালের পরীক্ষা আয়োজনেও জটিলতা দেখা দেয়। পরীক্ষার্থীদের দাবির মুখে কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল করা হয় এবং সেই বিষয়ের ফলাফল মূল্যায়ন করা হয় এসএসসির ভিত্তিতে ‘বিষয় ম্যাপিং’-এর মাধ্যমে। এতে অনেকেই ধারণা করেছিলেন পাসের হার বাড়বে, তবে বাস্তবতা হয়েছে তার বিপরীত।
দীর্ঘ সময়ের পরিসংখ্যানে পতন
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)–এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সালে এইচএসসিতে পাসের হার ছিল ৫৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। এরপর তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং বেশ কয়েক বছর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করে। তবে চলতি বছর তা নাটকীয়ভাবে কমে আসে।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সরাসরি পরীক্ষা না নিয়ে ‘বিশেষ প্রক্রিয়ায়’ ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ২০২১ ও ২০২২ সালে পাসের হার ছিল যথাক্রমে ৮৪ ও ৯৫ শতাংশের বেশি। ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৭৮ শতাংশে। এবার এসে তা নেমে গেছে ৫৭ শতাংশে।
অন্য সূচকেও নিম্নমুখিতা
এ বছর শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৪৫টি, যেখানে গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৮৮টি। বিপরীতে, শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০২, যা ২০২৩ সালে ছিল ৬৫টি।
‘গলদ অবশ্যই আছে’ — বোর্ড চেয়ারম্যান
ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, “আমরা কোনো পরীক্ষককে অতিরিক্ত নম্বর দিতে বলিনি। বরং এবার সঠিক মূল্যায়নের জন্য সময় বাড়ানো হয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী পাস করেনি—এটা দেশের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। এটি আমাদের আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। গলদ অবশ্যই আছে, এবং সেটি চিহ্নিত করে সংশোধনের দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের সবাইকে—শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বোর্ড এবং শিক্ষা প্রশাসনকে।
 
                 
                                                                                                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                