বিশেষ প্রতিবেদন: দেশের রেল খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে। তা কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন। তবে সবাই এ কথা নিঃসন্দেহে স্বীকার করে নেবেন যে ব্রিটিশ আমলে করা রেল খাতের উন্নয়নের সুফল এখনো পাচ্ছি আমরা।
বলা যায়, সে সময় করা একেকটি রেলসেতু যেন টেকসই উন্নয়নের বড় নিদর্শন। পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার চলনবিলের বাউনজান রেলসেতু তারই একটি। বিচিত্র ও সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এখনো টিকে আছে শত বছরের পুরোনো এ সেতু। এখনো একের পর এক ট্রেন চলাচল করে সেটি দিয়ে।
তবে কালের পরিক্রমায় এ সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। দীর্ঘদিনে সংস্কার না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভাঙ্গুড়া রেলসেতু। ফলে এ সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
ঢাকার সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র পথ বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর রেললাইন। ১৪টি পিলারের ওপর লালরঙা এ সেতু তৈরি করা হয়।
১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির অধিকাংশ পিলারের পলেস্তারা খসে পড়েছে। কিছু পিলারে ফাটলও রয়েছে। দুটি পিলারের পাশে লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে গার্ডার আটকে রাখা হয়েছে। এ অবস্থাতেই সেতুটির ওপর দিয়ে ট্রেন চলছে। ট্রেন এলেই লাল পতাকা উড়িয়ে গতি কমিয়ে সংকেত দেন একজন কর্মী। এতে চালক ট্রেনের গতি কমিয়ে দেন। ধীরে ধীরে সেতু পার হয় ট্রেন।
এমন পরিস্থিতিতে প্রতিদিন প্রায় ৩৫টি ট্রেন এই পথে চলাচল করে। এসব ট্রেনে চলাচল করে প্রায় ৭৫ হাজার যাত্রী। সেতুর কাছে ট্রেন এলেই যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করে। অনেকেই ট্রেন থামলে বা গতি কমলে নেমে যান, হেঁটেই পার হন সেতু। অন্যদিকে বাধ্য হয়ে গতি কমিয়ে দেওয়ায় মাঝেমধ্যে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ও ঘটে।
সম্প্রতি রেল বিভাগ সেতুটি মেরামতের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে। তবে দুটি পিলারের পাশে লোহার অ্যাঙ্গেলের কাঠামো তৈরির পর কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
প্রায় দুই মাস হলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কোনো কাজ করছে না। তবে তাদের বক্তব্য হচ্ছে, বিলে পানি বাড়ার কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। পানি একটু কমলে আবার কাজ শুরু করা হবে।
ভাঙ্গুড়া রেলসেতুর সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়ার দরকার ছিল আরও আগে। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ রেলসেতুর সংস্কারকাজ যেন দ্রুত শেষ করা হয়, বিষয়টি নিশ্চিত করা হোক।