দৈনিক সহযাত্রী

অবশেষে ছন্দ ফিরছে চা-শিল্পে

বিশেষ প্রতিবেদন: চা আমাদের এক সময় অন্যতম প্রধান অর্থকরী সফল ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে তা অতীত ঐতিহ্য হারিয়েছে। সে স্থান দখল করে নিয়েছে অন্য কোন অনুষঙ্গ। ফলে দেশীয়ভাবে চায়ের উৎপাদন ও বিপণন আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। আর চা শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে অসন্তোষের কারণেও পুরো শিল্পেই একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে। ফলে উৎপাদনেও যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। যা এই শিল্প ও জাতীয় অর্থনীতির জন্য খুবই ইতিবাচক।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, মজুরি নিয়ে চা-শ্রমিকদের আন্দোলনের অবসানের পর সেপ্টেম্বরে চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড হয়েছে। এ সময়ে দেশের ১৬৭টি বাগান এবং ক্ষুদ্রায়তন চা-বাগানে চা উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ কেজি। এর আগে মাসভিত্তিক সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড ছিল গত বছরের অক্টোবরে। ওই মাসে ১ কোটি ৪৫ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল। চা উৎপাদনের এ তথ্য গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ চা বোর্ড।

বোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, গত সেপ্টেম্বরে রেকর্ড উৎপাদন চা-শিল্পের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক ঘটনা। প্রয়োজনীয় বৃষ্টি, সঠিক সময়ে ভর্তুকি মূল্যে সার বিতরণ, চা রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রণোদনা, নিয়মিত বাগান তদারকি, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও শ্রমকল্যাণ নিশ্চিত করায় এ বছর চায়ের উৎপাদন ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। সরকারের নানা উদ্যোগের পাশাপাশি বাগানমালিক, চা ব্যবসায়ী ও চা-শ্রমিকদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফলে চা-শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও তারা জানিয়েছেন।

মূলত, শ্রমিক কর্মবিরতির কারণে গত আগস্টে চায়ের উৎপাদন কমে যায়। দৈনিক মজুরি ১২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে ১৩ আগস্ট থেকে সারা দেশের চা-বাগানগুলোতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন শ্রমিকরা। এ পরিস্থিতিতে ২৭ আগস্ট চা-বাগানমালিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেন। বৈঠকে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করার বিষয়ে সম্মত হন বাগানমালিকরা। এরপর ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেন চা-শ্রমিকরা।

আন্দোলনের প্রভাবে আগস্টে চা উৎপাদিত হয় ১ কোটি ৭ লাখ কেজি, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ লাখ কেজি কম। গত মাসে রেকর্ড উৎপাদনের কারণে আগস্ট পর্যন্ত চা উৎপাদনে যে ঘাটতি ছিল, তা-ও কমে এসেছে। গত আগস্ট পর্যন্ত চলতি বছরের ৮ মাসে চা উৎপাদিত হয়েছিল ৪ কোটি ৯০ লাখ কেজি, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ লাখ কেজি কম।

তবে সেপ্টেম্বরে রেকর্ড উৎপাদনের ওপর ভর করে এ ঘাটতি ৯ লাখ কেজিতে নেমেছে। সব মিলিয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতি বছরের ৯ মাসে চা উৎপাদিত হয়েছে ৬ কোটি ৩৮ লাখ কেজি। চা বোর্ড এ বছর ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সেটি অর্জন করতে আগামী ৩ মাসে ৩ কোটি ৬২ লাখ কেজি চা উৎপাদন করতে হবে বাগানমালিকদের। আগস্টে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে চা-বাগানমালিকদের।

মূলত, চা আমাদের একটি অতি সম্ভাবনাময় শিল্প এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি অতি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। তাই এই শিল্পে আরো গতিশীলতা এনে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এই খাতে দিতে হবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পৃষ্ঠপোষকতা। প্রয়োজনে ভর্তুকির ব্যবস্থা করে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে হবে। তাহলে এই শিল্প আবারো ছন্দে ফিরবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter