দৈনিক সহযাত্রী

শিরোনাম

বিমানের প্রশ্নফাঁসে জড়িত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও- ডিবি

ওমরাহ ভিসা

স্টাফ রিপোর্টার: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারেন। জড়িতদের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের শিগগির জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরই মধ্যে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বিমানের জুনিয়র পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে ডিবির লালবাগ বিভাগ। কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস করবেন এবং কীভাবে তা বিতরণ করবেন তার পরিকল্পনা আগেই করেন তারা। দুই থেকে সাত লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদের কাছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিভিন্ন পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে সংঘবদ্ধ প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্র। গতকাল শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় ডিবি।

এদিকে গ্রেফতার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এরা হলেন-আওলাদ হোসেন (২১), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৬), এনামুল হক (২৮), মো. হারুন-অর-রশিদ (৪০) ও মাহফুজুল আলম (৩১)।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, শুক্রবার বিমানের বড় ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার আগের দিন আমরা গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পাই। এরপরই সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করে দেই। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত এবং প্রশ্ন বিতরণের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করি। গ্রেফতাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তাদের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত। নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর থেকে তারা পরিকল্পনা শুরু করেন কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস করবেন এবং কীভাবে তা বিতরণ করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরীক্ষার আগের দিন চার-পাঁচজন মিলে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নটি ফাঁস করেন। পরে গ্রেফতাররা ফাঁস প্রশ্ন সরাসরি এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে বিতরণ করেন। এই প্রশ্ন তারা সর্বোচ্চ সাত লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বনি¤œ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। এছাড়া গরীব পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন দিয়ে তারা নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সই নিয়েছে যে তাদের বাড়ি কিংবা জমিজমা লিখে দিবে।

তিনি বলেন, গ্রেফতার আসামীরা এর আগেও বিভিন্ন প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। এ নিয়োগ পরীক্ষার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল। এই কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে সেই রহস্য উদ্ঘাটন করার জন্য আমরা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করব। গ্রেফতারদের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করব। তারা জানিয়েছে এর আগেও কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই টাকার ভাগ তারা আবার ওইসব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও দিয়েছে। এসব বিষয়ে আমরা বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করবো। তিনি আরও বলেন, তদন্তে আমরা আরও জানার চেষ্টা করবো এ প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে কারা জড়িত। এছাড়া বিমানের ডিজিএম ও জিএমের সমন্বয়ে যে কমিটি গঠিত হয়েছিল তাদের কাজ ছিল প্রশ্ন ফাঁসের মতো বিষয় রোধ করা। কিন্তু তাদের চোখের আড়ালে কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস করা হলো এ বিষয়ে তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো। যারা ফাঁস করা প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া এবং বিমানের কমিটি প্রশ্ন ফাঁসের দায় নেবে কি না জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, পরীক্ষা কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো। এছাড়া গ্রেফতারদের কাছেও রিমান্ডে আমরা এ বিষয়ে তথ্য জানার চেষ্টা করবো। চক্রটি ফাঁস করা এই প্রশ্ন কতজন পরীক্ষার্থীদের কাছে বিলি করেছিল এ বিষয়ে ডিবি কি জানতে পেরেছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তদন্ত শেষে এ বিষয়ে আমরা সঠিক সংখ্যাটি জানাতে পারবো।

ডিবি প্রধান বলেন, আমরা অভিভাবকদেরও বলেছিলাম প্রশ্ন ফাঁসের এ ধরনের ঘটনা তাদের চোখের সামনে আসলে যেন তারা আমাদের জানায়। কিন্তু কিছু অসাধু চক্র প্রশ্ন ফাঁস করে মানুষজনকে বিলি করে আসছে টাকার বিনিময়ে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যেকোনো অভিভাবক আমাদের তথ্য দেয়নি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কমিটির গাফিলতি নাকি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরীক্ষা কমিটির কাজ হচ্ছে প্রশ্নপত্র ছাপানো থেকে শুরু করে নিরাপদে পরীক্ষা হলে পৌঁছানো এবং পরীক্ষাটি সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করা। এই কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে সেটি আমরা জানার চেষ্টা করবো। প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি থাকলে তাকে গ্রেফতার না করতে কোনো চাপ ডিবির ওপর থাকে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত থাকে তাদের প্রত্যেককে আমরা আইনের আওতায় আনি। কোনো তথ্য আসলে তা আমরা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেই। প্রশ্ন ফাঁসের অধিকাংশ মামলার ক্ষেত্রে দেখা যায় যখন বিচার কাজ শুরু হয় তখন মামলা আদালতে টেকে না। এক্ষেত্রে সঠিক ধারায় মামলা করা হয় কি না এবং গতকালের ঘটনায় কোন আইনে মামলা করা হয়েছে বা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আইন বিচার বিশ্লেষণ করে মামলা করা হচ্ছে, যাতে আসামীরা সর্বোচ্চ সাজা পান। এভাবে যদি পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়, গুটিকয়েক মানুষ কালো টাকা দিয়ে তা কিনে ফেলে, এতে মেধাবীদের আর আসার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter