সহযাত্রী ডেস্ক: শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ৬ মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। তবে একমাসের মধ্যে আপিলের শর্তে তাদের জামিনও দেওয়া হয়েছে।
সোমবার বেলা ৩টার দিকে এই রায় ঘোষণা করেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা।
দণ্ড পাওয়া অপর তিনজন হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রায় ঘোষণার সময় ড. ইউনূসসহ চারজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
তবে রায় ঘোষণার পর আপিলের শর্তে তাদের জামিন দেওয়া হয়। আপাতত তাদের কারাগারে যেতে হচ্ছে না। আগামী এক মাসের মধ্যে আপিল করতে হবে বলে রায়ে বলা হয়। রায়ে বলা হয়েছে, আসামিদের পে শ্রম ও আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের যেসব ধারায় ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, সেসব ধারায় সর্বোচ্চ সাজা ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা।
ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। পরে চরতি বছরের ৬ জুন ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন ড. ইউনূস ও অন্যরা। আপিল বিভাগ গত ২০ আগস্ট সেই আবেদন চূড়ান্তভাবে খারিজ করে দেন।
এরপর গত ২২ আগস্ট শ্রম আদালতে এই মামলার স্যা গ্রহণ শুরু হয়, যা শেষ হয় গত ৯ নভেম্বর। এতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের চারজন কর্মকর্তা স্যা দেন। গত ২৪ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার জন্য সোমবার (১ জানুয়ারি) ধার্য করেছিলেন আদালত।
মামলায় অভিযোগ আনা হয় যে শ্রম আইন, ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিানবিশকাল পার হলেও তাঁদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বাৎসরিক ছুটি দেওয়া, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয় না।
মামলায় আরও অভিযোগ আনা হয়, গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয় না।
অভিযোগের জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ৯ নভেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজন বিবাদী লিখিতভাবে আদালতকে বলেছিলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী। কারণ, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেগুলো চুক্তিভিত্তিক। তবে গ্রামীণ টেলিকমের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ী কর্মীর মতো ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড), আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি), অর্জিত ছুটি ও অবসরকালীন ছুটি দেওয়া হয়ে থাকে। মামলায় নিয়োগ স্থায়ী না করার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রশাসনিক ও দেওয়ানি মামলার বিষয়।
আদালতে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এর লভ্যাংশ বিতরণযোগ্য নয়, সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।