দৈনিক সহযাত্রী

শিরোনাম

হু হু করে বাড়ছে কাঁচা মরিচে দাম, কেজি ছুঁয়েছে ৪০০ টাকায়

ওমরাহ ভিসা

সহযাত্রী ডেস্ক: রাজধানীর বাজারগুলোতে হু হু করে বাড়ছে কাঁচা মরিচের দাম। আমদানির অনুমতি দিয়েও দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না। উল্টো আমদানি অনুমতির পর একদিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ১০০ টাকা বেড়ে গেছে। বাজারে এখন কাঁচা মরিচের কেজি ৪০০ টাকা ছুঁইছুঁই।

সোমবার (২৬ জুন) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন ১০০ টাকা। আর এক কেজি কিনলে দাম রাখা হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৪০০ টাকা।

হঠাৎ কাঁচা মরিচের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় গতকাল রোববার আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, রোববার সারাদিনে কাঁচা মরিচের ৩০টি আইপি-তে ১১ হাজার ৬০০ টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সরকার আমদানি অনুমতি দেওয়ার পর একদিনের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজিতে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। একদিন আগেই গতকাল রোববার কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ৩০০ টাকা।

হুট করে কাঁচা মরিচের এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ বলতে পারছেন না অধিকাংশ খুচরা ব্যবসায়ী। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

অন্যদিকে পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টিতে কাঁচা মরিচের ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাজারে সরবরাহ কম। সরকার আমদানির অনুমতি দিয়ে প্রমাণ করেছে কাঁচা মরিচের ঘাটতি রয়েছে। সবকিছু মিলেই কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে গেছে।

তারা বলছেন, সরকার কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দিলেও ঈদের আগে দাম কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ, আমদানি করা কাঁচা মরিচ দেশে আসতে সময় লাগবে।

রামপুরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা কাঁচা মরিচের পোয়া বিক্রি করছেন ১০০ টাকা। তবে এক কেজি নিলে কোনো কোনো ব্যবসায়ী ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা দাম রাখছেন।

কাঁচা মরিচের দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী মো. মিলন বলেন, গতকাল এক পোয়া কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা বিক্রি করেছি। আজ আড়তে দাম আরও বেড়ে গেছে। যে দামে কিনতে হচ্ছে তাতে ১০০ টাকার কম পোয়া বিক্রির উপায় নেই।

কাঁচা মরিচের এমন দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে এ ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে কাঁচা মরিচের দামে আগুন লেগেছে! কী কারণে এমন দাম বেড়েছে বলতে পারবো না। আড়তে কাঁচা মরিচ খুব বেশি পাওয়া যাচ্ছে না।

সকালে খিলগাঁও বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচের কেজি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেখানকার ব্যবসায়ী আমিনুল বলেন, এক পোয়া কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা। এক কেজি নিলেও ৪০০ টাকা। ৪০০ টাকার নিচে কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি করা সম্ভব না।

কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম বাড়ার মূল কারণ আমরা বলতে পারবো না। এটা আড়তদাররা ভালো বলতে পারবেন। তবে আমাদের ধারণা বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। এর পেছনে কোনো বিশেষ চক্র থাকতে পারে।

কারসাজির মাধ্যমে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মালিবাগের ব্যবসায়ী মো. জুয়েল। তিনি বলেন, কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার পেছনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই। আমাদের ধারণা, বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। ভালোভাবে বাজার মনিটরিং করলে দাম কমে আসতে পারে।

রামপুরা বাজারে কাঁচা মরিচের দাম শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন সদরুল হোসাইন। এই ক্রেতা বলেন, বাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে এসে দাম শুনে অবাক হয়েছি। এক পোয়া কাঁচা মরিচ ১০০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল (রোববার) খবর দেখলাম কাঁচা মরিচের কেজি ৩০০ টাকা। একদিনের ব্যবধানে কেজিতে আরও ১০০ টাকা বেড়ে হয়ে গেল ৪০০ টাকা।

তিনি বলেন, এক পোয়া কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা ভাবা যায়! আসলে বাজারে যাদের নজরদারির করার কথা তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না। এ কারণেই মুনাফালোভী এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ইচ্ছামতো জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।

কাঁচা মরিচের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কারওয়ানবাজারে বাজার করতে আসা খায়রুল হোসেন বলেন, কাঁচা মরিচে ঠাডা পড়েছে। এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম প্রায় ৪০০ টাকা। হঠাৎ দেশে কী এমন হয়ে গেল যে কাঁচামরিচের দাম এত হয়ে যাবে? এ সবই ব্যবসায়ীদের কারসাজি।

কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কম। দেশে পণ্যটির সংকট থাকায় সরকার আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আমদানির কাঁচা মরিচ দেশে আসতে সময় লাগবে। ঈদের আগে কাঁচা মরিচের দাম কমার সম্ভাবনা খুব কম।

তিনি বলেন, কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজির কোনো সুযোগ নেই। বাজারে চাহিদার থেকে সরবরাহ কম থাকলে দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। এখন কাঁচা মরিচের যে চাহিদা তার থেকে বাজারে সরবরাহ অনেক কম। এ কারণে দাম বেড়ে গেছে।

বাজারটির আরেক ব্যবসায়ী শামসুল বলেন, বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাঁচা মরিচের ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আবার ঢাকায় কাঁচা মরিচ আনার পরিবহনও কম। এখন বেশিরভাগ ট্রাক-পিকআপভ্যান কোরবানির পশু পরিবহনে ব্যস্ত। একদিকে মরিচের ক্ষেত নষ্ট হওয়া অন্যদিকে পরিবহন সংকটের কারণে বাজারে কাঁচামরিচের সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে দাম অস্বাভাবিক বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কম বলেই সরকার আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আমদানি করা কাঁচা মরিচ বাজারে এলে দাম কমে যাবে বলে আমাদের ধারণা। তবে ঈদের আগে দাম কমার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। কারণ, আমদানির কাঁচা মরিচ ঈদের আগে বাজারে আসবে না।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter