দৈনিক সহযাত্রী

শিরোনাম

ওলামা লীগ সাধারণ সম্পাদকের আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস

ওমরাহ ভিসা

সহযাত্রী ডেস্ক: বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের। নেতৃত্বে পরিবর্তন এনেও সংগঠনটির কর্মকাণ্ডে স্বস্তিতে থাকতে পারছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ওলামা লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। যদিও ২৮ সদস্যের সদ্য ঘোষিত কমিটির ১৬ জনই যৌথ বিবৃতিতে পদপ্রাপ্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ঘোষিত কমিটিতে সভাপতি হিসেবে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা কেএম আব্দুল মমিন সিরাজীর নাম দেখা যায়। আর সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন মো. আমিনুল হক। আর কার্যকরী সভাপতির দায়িত্বে হাফেজ মাওলানা সাগর আহমেদ শাহীন।

এ তালিকা প্রকাশের পরপরই এটিকে বিতর্কিত বলে তা বাতিলের দাবি জানান সংগঠনটির একটি অংশ। এর প্রতিবাদে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন এ অংশের নেতাকর্মীরা।

এরমধ্যেই ওলামা লীগের সদ্য নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল হকের আপত্তিকর একটি ভিডিও ফাঁস হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্য অ্যাপে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে দল ও দলের বাইরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকের শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ নানা বিষয় নিয়ে বিতর্কের মধ্যে এই আপত্তিকর ভিডিওটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, একটি হোটেল কক্ষে গানের তালে তালে এক রমণী নৃত্যরত আর ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ঠিক তার সামনের সোফায় বসে সেই রমণীর নৃত্য উপভোগ করছেন।

এদিকে আমিনুলকে বাদ দেওয়াসহ বিতর্কিত কমিটি বাতিলের দাবিতে প্রেস ক্লাবের সামনে গত শনিবার মানববন্ধন করেছে সংগঠনটির পদ প্রত্যাখ্যান করা নেতাসহ অনেকে।

ওলামা লীগের সিনিয়র নেতা মুফতি মিজানুর রহমান মিজানীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আসা নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন হাফেজ মাওলানা সোলায়মান কিশোরগঞ্জী, হাফেজ হাওলানা মুফতী মিজানুর রহমান মিজানী, হাফেজ মাওলানা আব্দুস সাত্তার, মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী, মাওলানা আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন, হাফেজ মাওলানা সাইফুল ইসলাম, হাফেজ মাওলানা ইদ্রিস আলম আল কাদেরী, হাফেজ মাওলানা আনোয়ার হোসেন জুয়েল, মুফতি মাওলানা মো. হাসানুজ্জামান চিশতী, মাওলানা সৈয়দ ইকবাল আহমেদ আজহারী, আব্দুল হালিম খন্দকার, মো.কায়সার-ই-আযম রানু, হাফেজ মাওলানা ইব্রাহিম, মাওলানা শওকত হোসেন সেলিমপুরী, মো. আব্দুস সবুর প্রমুখ।

এ বিষয়ে ওলামা লীগের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী বলেন, রাতের আঁধারে ফেসবুকের মাধ্যমে ওলামা লীগের যে বিতর্কিত কমিটি প্রকাশিত হয়েছে তাতে ওলামা লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যারা রাজপথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে কাজ করে আসছেন তাদের অনেককেই বাদ দেওয়া হয়েছে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে যারা নির্যাতিত-নিপীড়িত ও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এমনও লোককে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে যারা কোনোদিনই ওলামা লীগ করেননি। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যার নাম এসেছে তাকে ওলামা লীগের কেউ চেনেন না। পরে আমরা জানতে পারলাম, আমিনুল হক পাবনা থেকে আগত এবং ওলামা লীগে একজন অনুপ্রবেশকারী। তাদের কাছে আওয়ামী ওলামা লীগ নিরাপদ নয়।

ওলামা লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও একাংশের সাবেক সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী বলেন, সাংগঠনিক কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে রাত ১২টার পর কোনো প্যাড ছাড়া ফেসবুকে এ কমিটির তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। বিতর্কিত এ কমিটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অনুমোদন দিয়েছেন কি না তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে। কমিটির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন কি না, তাও স্পষ্ট নয়।

তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ কর্তৃক স্বীকৃত ওলামা লীগের একটি সুন্দর স্বচ্ছ কমিটি চেয়েছিলাম। গত ২০ মে একটি সফল সম্মেলন করেছি। কিন্তু প্রকাশিত কমিটির মাধ্যমে আমাদের কাঙ্খিত প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। কমিটির মধ্যে যেসমস্ত নতুন মুখ রয়েছে তারা কারা? তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ও কেউ জানে না। যেহুত আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে ওলামা লীগের কমিটির বিষয়ে কোন প্রেস ব্রিফ্রিং করা হয়নি তাই এই কমিটি মানি না। আমরা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নীলনকশার বিতর্কিত ওলামা লীগের এই কমিটি বাতিলের জন্য জোর দাবি করছি।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আমিনুল হক বলেন, আমাকে ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে কিছু মানুষ বিভিন্ন অভিযোগ করছে। যেগুলো এতদিন তারা করেনি। এ ভিডিওটি তাদের কাছে থাকলে এতদিন প্রকাশ করেনি কেন?

ভিডিওতে দেখা যাওয়া ব্যক্তিটি আপনি কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে মো. আমিনুল হক বলেন, আমার নামের সাথে মিল আছে এমন বিভিন্ন বিষয় এনেও আমাকে কালার করার চেষ্টা চলছে। তাই আমি কোনো ভিডিও দেখিনি। আল্লাহ যেন তাদের হেদায়েত দান করেন এই দোয়া করি।

আলেম না হয়েও আপনি ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক কীভাবে হলেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, আমার পরিবারে অন্তত ২৫ জন আলেম আছেন, আমি দুটি মাদ্রাসা পরিচালনা করি। আলেম, দ্বীনদার, ধর্মপ্রিয় মানুষকে নিয়ে ওলামা লীগ পরিচালিত হয়। আমি চকবাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। আমাকে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমি প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাব।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter