দৈনিক সহযাত্রী

সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীল কনটেন্টের ছড়াছড়ি, এদের থামাবে কে?

উমার রাযী: আমাদের দেশের সোশ্যাল মিডিয়া অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধ ও অশ্লীল কনটেন্ট এখন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। অর্থ উপার্জনের আশায় একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি ভিডিও শেয়ারিং সাইটে কিছু অশ্লীল ও অশোভন কনটেন্ট ছড়িয়ে দিচ্ছে। কথিত শর্ট ফিল্ম, নাটক, কৌতুক, কল রেকর্ড এবং বিভিন্ন কথোপকথনের চ্যাটিংয়ের নামে যৌনতায় ভরা কনটেন্ট ছড়ানো হচ্ছে। যা আমাদের পারিবারিক ও সমাজ জীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক ও ইনস্টাগ্রাম সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। শুরুতে নিখাদ বিনোদন মাধ্যম হিসাবে সাইটগুলোর সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা পরিচিত হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীদের বড় একটি অংশ আয়ের মাধ্যম হিসাবে সাইটগুলো বেছে নিয়েছে। ইতিহাস, রাজনীতি, ভ্রমণ, সংবাদ, স্বাস্থ্য, গেম, বিষয় সমালোচনা, আলোচিত ঘটনা, রান্না, বাগান পরিচর্যাসহ অসংখ্য বিষয়ে তারা ভিডিও তৈরি করেন।

পেজ, আইডি ও চ্যানেলে লাইক বা সাবস্ক্রাইব করা না থাকলেও এসব কনটেন্ট সামনে চলে আসে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ও আগ্রহের ধরন বুঝে সাইটগুলো একই ধরনের পোস্ট ব্যবহারকারীদের সামনে আনছে। ফলে বেশি বেশি ভিডিওগুলো দেখা হচ্ছে। হচ্ছে আয়ও। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু চক্র অশ্লীল কনটেন্ট ছড়িয়ে দিচ্ছে।

কখনো কখনো সামাজিক সচেতনতার নামে অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। কনটেন্টজুড়ে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি থাকে। শেষদিকে গিয়ে সচেতনতামূলক বার্তা দেওয়া হয়। অবৈধ সম্পর্কের গল্প বানিয়ে তা রেকর্ড করেও পোস্ট করা হয়। ভিডিওর ওপর যৌন উত্তেজক বিভিন্ন ছবি রাখা হয়। যাতে ব্যবহারকারী ভিডিওটি দেখতে আকর্ষণ বোধ করে।

এইসব অপরাধী চক্ররা বেশি অর্থ আয়ের নেশায় তৈরি করে অশ্লীল ভিডিও। কৌতূহলীরাও ভিডিওগুলো দেখেন। সচেতন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মতে, ভিডিও সুবিধা চালু হওয়ার পর থেকে এই প্ল্যাটফর্মটি সামাজিক যোগাযোগের চেয়ে ভিডিও দেখায় বেশি সময় ব্যয় করছেন তারা। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাসহ বয়স্ক, এমনকি শিশুরা- যাদের ফেসবুক আইডি নেই, তারাও পরিবারের বড়দের মোবাইল থেকে এসব ভিডিও দেখছেন। ভিডিও অপশনে ধারাবাহিকভাবে গান, সিনেমা, বিভিন্ন ঘটনা থেকে শুরু করে খুন, হাইজ্যাক ও পর্নো সবই স্ক্রিনে আসতে থাকে। দেখা যায়, কেউ আগ্রহী না হলেও এমন কন্টেন্ট সামনে চলে আসে। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা এই মাধ্যমের এমন কন্টেন্টের কারণে সামাজিক মূল্যবোধের অবনতির আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে, বেশ কয়েকে বছর ধরেই মূলধারার গণমাধ্যম ছাপিয়ে আলোচনায় অল্টারনেটিভ মাধ্যম হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ নিয়ে যখন দেশের মূলধারার গণমাধ্যম দর্শক ও পাঠক স্বল্পতায় ভুগছে, তখন ফেসবুক কিংবা ইউটিউবের মতো মাধ্যমের এক বা দুই মিনিটের একটা কন্টেন্ট কয়েক লাখ দর্শক দেখছে। আবার দিন শেষে এসব মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বিষয়ই মূলধারার গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কনটেন্টগুলো শুধু যে বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে তা নয়। পাশের দেশের বাংলা ভাষাভাষী অনেকে এসব ভিডিও তৈরি করছেন। হিন্দিসহ অন্যসব ভাষায় তৈরি বিভিন্ন অশ্লীল কনটেন্ট বাংলায় ডাবিং করে পোস্ট করা হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশীদের ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৬টি ভিডিও টিকটক সরিয়েছে। এর আগের ৩ মাসে সাইটটি বাংলাদেশীদের ২৬ লাখ ৩৬ হাজার ৩৭২টি ভিডিও সরিয়ে নেয়। এভাবে ফেসবুক, ইউটিউবসহ অন্য সাইটগুলোও অসংখ্য ভিডিও সরিয়েছে। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি।

এমতাবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ভিডিও শেয়ারিং সাইটে অশ্লীল কনটেন্টের দৌরাত্ম্য বন্ধে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রচলিত আইনে এসব বন্ধ করা না গেলে প্রয়োজন নতুন আইন প্রণয়ন করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা কোন ভাবেই সম্ভব হবে না।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter