সহযাত্রী ডেস্ক: যথাযোগ্য মর্যাদা এবং ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উদযাপিত হয়েছে। এদিন শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় জাতি স্মরণ করে তার অমর শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। মিরপুর বধ্যভূমি ও রায়েরবাজারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। এসময় বক্তারা বলেন, যে দেশের জন্য বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ দিয়েছেন, সেই বাংলাদেশ আমরা চাই, যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছেন, দুই লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন, সেই বাংলাদেশকে আমরা ফিরিয়ে দিতে চায়। সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে পুনরুদ্ধার করে গণমানুষের কাছে ফিরিয়ে দেয়া, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। যে বাংলাদেশে সুষ্ঠুভাবে গণতন্ত্রের চর্চা হবে, মানুষ ভোট দিতে পারবে, তাদের পছন্দমতো প্রতিনিধি তৈরি করতে পারবে, তাদের জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে, যে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সুবিচার হবে, বিচারব্যবস্থাকে এখানে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ করা হবে, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করা হবে। সেই কমিটমেন্ট মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে ছিল।
আবার কেউ কেউ দেশে দুর্নীতি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কর্তৃক বাড়াবাড়ির নিন্দা জানিয়ে বলেন যে, স্বাধীনতার এতোবছর পরও রাতের আধারে মানুষ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভোরের আলো ফুটতেই বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধগুলোতে ঢল নামে সর্বস্তরের মানুষের। পায়ে পায়ে সবার গন্তব্য বধ্যভূমি। এখানেই যে বাঙালির সেরা সন্তানদের হত্যা করে ফেলে রেখেছিল পাকিস্তান বাহিনী, চালিয়ে ছিল পৃথিবীর নৃশংস এক গণহত্যা। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের কণ্ঠে ছিল উন্নত-সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে তুলতে সঠিক ইতিহাসের চর্চার দাবিও ছিল মানুষের মাঝে।
দিবসটি উপলক্ষে বুধবার সকালে কালো পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জলন, শোক র্যালি, শ্রদ্ধা নিবেদন, চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দু’দিন আগে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা পরিকল্পিতভাবে দেশের কৃতী সন্তানদের হত্যা করে। তারপর থেকে দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছিল। ভোরের সূর্য ওঠার আগেই হাজারো মানুষ ভিড় করেন মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সামনে। সবার হাতে ছিল ফুলের তোড়া ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে লেখা কালো ব্যানার।
সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ বেদীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। শহীদদের সম্মানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম ও কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এস এম কামাল হোসেন ও আফজাল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে একে একে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা।
এদিকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এসময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ দলের কেন্দ্রীয় এবং মহানগর, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিএনপি ও স্ব-স্ব সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখবেন। এছাড়া জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে এদিন বিকেল তিনটায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালত এ আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান এ তথ্য জানান। তিনি জানান, আজ বুধবার ছিল মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের দিন। আসামিরা আদালতে হাজির না হওয়ায় সময়ের আবেদন করেন তাদের আইনজীবী। এরপর আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
২০১২ সালে নাশকতার অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) একটি টিম শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে। পরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সন্ত্রাস বিরোধ আইনের মামলায় তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।