সহযাত্রী ডেস্ক: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘হুমকি-ধমকি দিয়ে কোনো কাজ হবে না, আপনাদের সময় শেষ। ইনশাআল্লাহ পতন আমরাই দেখে যাব। আমাদের জনগণই সেটা করবে। শুধু সমাবেশ সফল করেই শেষ করবে না জনগণ। এই সরকারের পতনের আন্দোলনে, এ সরকারের বিদায়ের আন্দোলনে এবং আগামী দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের জন্য জনগণ প্রস্তুতি নিচ্ছে। জনগণ অবশ্যই চূড়ান্ত আন্দোলনে আসবে।’
বুধবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘বিপ্লব ও সংহিত দিবস’ উপলক্ষে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এখনো সরকারের পদত্যাগ আন্দোলন শুরু করিনি, অথচ সমাবেশগুলোতে দেখছেন সরকার এদেশের জনগণকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে কিভাবে বাধার সৃষ্টি করছে। ঢাকার সমাবেশেও বাধার সৃষ্টি করবে। অতীতে যেভাবে সাঁতার কেটে, পায়ে হেঁটে এসে জনগণ সমাবেশ সফল করেছে আগামী সমাবেশগুলোও সেভাবে সফল করবে।’
‘আমাদের এই কর্মসূচিকেই সরকার ভয় পেয়েছে। বুঝতে পারছেন, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে সরকার কতটা ভয় পায়। সুতরাং যতই তারা হুমকি-ধমকি দিক না কেন কোনো কাজ হবে না,’ বলেন তিনি।
খন্দকার মোশারফ বলেন, ‘সাধারণ জনগণ আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।’
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান আধুনিক সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গঠনের জন্য কাজ করেছেন। ’৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল কিন্তু জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে চাল রফতানি হয়েছে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘আজকে গণতন্ত্র নেই, দেশের অর্থনীতি আজকে ধ্বংসের কিনারায়। আজকের জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। গরিব মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে থাকছে, মধ্যবিত্ত মানুষ গরিব হয়ে যাচ্ছে। ৪২ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে।’
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই যে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যা করেছে, তারা কখনো গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে পারবে না। যারা অর্থনীতিকে লুটপাট করে পাচার করে এই অবস্থায় নিয়ে গেছে এই অর্থনীতিকে সঠিক পথে নিয়ে আসা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। যে সরকার বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে তাদের পক্ষে বিচারব্যবস্থা আর নিরপেক্ষতায় আনা সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘সারা দেশের মানুষ উপলব্ধি করে ও বিশ্বাস করে- এই সরকারের হাত থেকে এ দেশকে রক্ষা করতে হবে। দেশকে রক্ষা করতে হলে এই সরকারকে বিদায় দিতে হবে। কোনো স্বৈরাচারী সরকার কখনো স্বেচ্ছায় বিদায় নেয়নি। অতীতে ইতিহাস রয়েছে। তাই আজকে জনগণ প্রস্তুত হচ্ছে।’
‘আমাদের বিভাগীয় সমাবেশগুলো আপনার লক্ষ্য করেছেন শুধুমাত্র বিএনপি’র লোকেরাই এত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে উপস্থিত হচ্ছে তাই নয়, সাধারণ মানুষও উপস্থিত হচ্ছে। সাধারণ জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে,’ বলেন বিএনপি’র এই শীর্ষ নেতা।
বিভাগীয় সমাবেশগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যে কর্মসূচি পালন করছি, এখনো মূল দাবিতে আসিনি। বর্তমান সভাগুলো হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের বিরুদ্ধে আমরা এই সমাবেশ করছি। এই সমাবেশের পরে যে আন্দোলন প্রকৃতপক্ষে শুরু হবে সেটা হবে- এ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং এ দেশের জনগণের নিজের হাতে ভোট দিয়ে জনগণের প্রতিনিধি দ্বারা এদেশে খালেদা জিয়ার সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।
‘গত ১৪ বছরে আমাদের নেতা-কর্মীদের মধ্য থেকে ৬০০ জনকে গুম করেছে। এক হাজারের অধিক নেতা কর্মীদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে। বিএনপির ৩৫ লাখ লোকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে।’
এ সময় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন