সহযাত্রী স্পোর্টস ডেস্ক: টানটান উত্তেজনা এবং শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে অবশেষে জিতল বাংলদেশ। এ যেন থ্রিলার মুভিকেও যেন হার মানাবে ম্যাচের শেষ অংশটা। দমবন্ধ এক ম্যাচ দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব। ষোলআনা শিহরণ ছড়ানো ম্যাচে কখন কী হচ্ছে যেন বুঝাই যাচ্ছিলো না। শেষ ওভারে যেখানে জয়ে জন্য প্রয়োজন ১৬ রান, সেখানে প্রথম ৫ বলে মোসাদ্দেক ২ উইকেট নিলেও শেষ বলে প্রয়োজন হয় ৫ রান। সেই বলে মুজারাবানিকে স্ট্যাম্পিং করে যখন জয়ের আনন্দে মেতে উঠে বাংলাদেশ, তখনই নো বলের সিদ্ধান্ত ভেসে উঠে বিগ স্ক্রিনে। ফলে আবারো ফিল্ডিং সাজিয়ে মাঠে নামতে হয় বাংলাদেশকে।
আগের বল নো হওয়ায় ফ্রি হিট বলে তখন জয়ের জন্য প্রয়োজন হয় ৪ রান। তবে শেষ বল মুজারাবানি আর ব্যাটে লাগাতে না পারায় ৩ রানের জয় নিয়েই ফের উল্লাসে মাতে টিম টাইগার্স।
আজো বল হাতে প্রথম ওভারেই উইকেটের দেখা পান তাসকিন আহমেদ। ১৫১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই ওয়েসলি মাধেভেরেকে হারায় জিম্বাবুয়ে। দলীয় তৃতীয় ওভারে ফের তাসকিনের আঘাত, ৭ বলে ৮ করে ফিরেন ক্রেইগ আরভিন। এরপর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে জিম্বাবুয়ে, তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মাত্র ১ রানেই তারা হারিয়ে ফেলে গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট। মুস্তাফিজের করা সেই ওভারে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে জিম্বাবুয়ে সমর্থকদের মাঝে। ওভারের দ্বিতীয় বলে মিল্টন শুম্বাকে ফেরানোর পর বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের আগের তিন ম্যাচের জয়ের নায়ক সিকান্দার রাজাকে ফেরান শূন্য রানে।
পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ৩৬ রান। সেখান থেকে ৩৪ রানের জুটি গড়ে শন উইলিয়ামস ও রেজিস চাকাভা প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে তুলেন। তবে আবারো তাসকিনের আঘাতে রেজিস চাকাভা ফিরেন ১৯ বলে ১৫ রানে। তবে এবার রায়ান বার্লকে সাথে নিয়ে জিম্বাবুয়েকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন শন উইলিয়ামস। তবে ১৯তম ওভারে সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত রান আউটের শিকার হয়ে ফিরে যান শন উইলিয়ামস। ৪২ বলে ৬৪ রান করে শন উইলিয়ামস ফিরে গেলে ম্যাচে টানটান উত্তেজনার জন্ম হয়। শেষ ওভারে তখন জয়ের জন্য প্রয়োজন হয় ১৫ রান। সেখান থেকেই নাটকীয়তার শুরু। তবে সব শেষে স্বস্তির জয় পায় বাংলাদেশ।
একটা জয়ের জন্য যেখানে ১৫ বছরের অপেক্ষা, সেখানে দ্বিতীয় জয়টা এসে গেলো এক ম্যাচ পরেই। বিশ্বকাপের মূল পর্বে বাংলাদেশের তৃতীয় জয় এইটি। দ্বিতীয় জয় ছিল এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আর প্রথম জয় ২০০৭ বিশ্বকাপে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এর আগে
জিম্বাবুয়েকে ১৫১ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতকের দেখা পেয়েছিলেম নাজমুল হোসেন শান্ত। তার ৫৫ বলে ৭১ রানের ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫০ রানের সংগ্রহ পায় টাইগাররা। আফিফ হোসেন করেন ১৯ বলে ২৯ রান। এই দিন টসে জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে সাবধানী শুরুর পরও অস্বস্তিতে পড়ে বাংলাদেশ। আরো একবার ব্লেসিং মুজারাবানিতে ভাঙন ধরে বাংলাদেশের টপ অর্ডারে। সৌম্য সরকারের পর লিটন দাসও ফিরেন এই বোলারের শিকার হয়ে। দুই উইকেট হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৩২ রান। সৌম্য সরকার ০ ও লিটন দাস ফিরেন ১২ বলে ১৪ রানে। তবে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্তের ব্যাটে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ। দুজনের ৫৪ রানের জুটি ভাঙে শন উইলিয়ামসের বলে সাকিব আল হাসান ফিরে গেলে। ২০ বলে ২৩ রান করে সাকিব ফিরে গেলে শান্ত ৩৬ রানের আরো একটি জুটি গড়ে তুলেন আফিফ হোসেনকে সাথে নিয়ে। ১৭তম ওভারে ৫৫ বলে ৭১ রান করে সিকান্দার রাজার শিকার হন শান্ত। তবে আফিফ হোসেনের দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে ১৫০ রানের মাইলফলক পাড়ি দেয় বাংলাদেশ। এর মাঝে ৯ বলে ৭ করে ফিরেন মোসাদ্দেক। ১ বলে ১ করে রান আউটের শিকার নুরুল হাসান সোহান।