সহযাত্রী অনলাইন ডেস্ক: আগামী ৫ নভেম্বর বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশের ১০ দিন আগে বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বরিশাল জেলা বাস মালিক সমিতি। আগামী ৩ নভেম্বরের মধ্যে তাদের দাবি অনুযায়ী মহাসড়ক থেকে থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যান বন্ধ না হলে ৪ ও ৫ নভেম্বর বরিশাল বিভাগ থেকে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়া বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মিনিবাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দরাও একই দাবিতে ওই দু’দিন কর্মবিরতীর ঘোষণা দিয়েছেন। বাস-লঞ্চ বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে দুই মালিক সমিতি নানা যুক্তি দিলেও বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায় নুরুল আমিন বলেন, বরিশালে বিভাগীয় সমাবেশে লোক সমাগম ঠেকাতেই এগুলো করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নেপথ্য ইশারাতেই মালিক সমিতির নেতারা এগুলো করছেন।
তিনি আরো বলেন, কথিত ধর্মঘটের নাটক সাজিয়ে বরিশালের গণসমাবেশ ঠেকানো যাবে না। জনগণ সব বাধা উপেক্ষা করে যথাসময়ে নগরীর বেলর্স পার্ক (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) ময়দানের সমাবেশস্থলে পৌঁছাবে। প্রয়োজনে নদী সাঁতরে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সমাবেশে যোগদান করবেন। আর বরিশালের গণসমাবেশ থেকেই সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু করা হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
তবে বিএনপির এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সমাবেশ সফল হবে না বুঝতে পেরেই বিএনপি নেতারা মনগড়া বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
সূত্রমতে, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ৫ নভেম্বর বরিশালে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। নগরীর ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে বিএনপির নেতৃবৃন্দরা। সমাবেশ সফল করতে প্রতিদিনই চলছে বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রস্তুতি সভা। সমাবেশ ঘিরে যখন পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে ঠিক সেই মুহুর্তে আগামী ৪ ও ৫ নভেম্বর বাস ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ৫ নভেম্বর বিএনপির সমাবেশের একদিন আগে বাস বন্ধের বিষয়ে বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, সমাবেশের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। কবে কোথায় এই সমাবেশ হবে তাও জানি না।
বাসের পাশাপাশি লঞ্চ চলাচল বন্ধের আভাস দিয়েছেন লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা। বিএনপির সমাবেশ ঘিরে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কিনা সে বিষয়ে বরিশাল লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেন হবে? এখন যা পরিস্থিতি তাতে যেকোনো সময় লঞ্চ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সাথে লঞ্চ পরিচালনা ব্যয়ের সমন্বয় করতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। সেই সাথে চলছে যাত্রী সঙ্কট। পরিস্থিতি এমন যেকোনো সময় আমাদের লঞ্চ বন্ধ করে দিতে হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাস ও লঞ্চের পাশাপাশি বরিশাল নগরীর সাথে সংযোগ রক্ষায় কীর্তনখোলা নদী পারাপারে ব্যবহৃত খেয়া পারাপারও ৪ ও ৫ নভেম্বর বন্ধ থাকবে বলে আভাস মিলেছে। সেক্ষেত্রে খেয়া পারাপারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং মাঝি-মাল্লাদের অত্যাচার বন্ধের দাবিতে সাধারণ নাগরিকদের ব্যানারে দু’দিন খেয়া বর্জনের ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক নেতা বলেছেন, সময় হলে সবকিছু জানতে পারবেন। জনসমাগম ঠেকাতে আগামী ৪ ও ৫ নভেম্বর থ্রি-হুইলার চলাচলও বন্ধ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন থ্রি-হুইলার চালক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অসংখ্য চালকরা বলেন, সংগঠনের নেতারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের। ইতোমধ্যে মৌখিকভাবে তারা ৪ ও ৫ নভেম্বর সব ধরনের থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়ে বলেছেন। তবে এখন পর্যন্ত তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হয়নি। সব ধরনের গণপরিবহণ বন্ধের এসব আয়োজনকে সমাবেশ বানচাল করার ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মীর জাহিদুল কবির বলেন, খুলনার ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলছে বরিশালে, তবে এতে লাভ হবে না। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বড় গণজমায়েত হবে বরিশালে। এজন্য আমরা বিকল্প পদ্ধতি করে রেখেছি। তিন থেকে চার দিন আগ থেকেই জেলা ও উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা বরিশালে এসে অবস্থান করবেন।