দৈনিক সহযাত্রী

শিরোনাম

ডা. শফিকুর রহমান দ্বিতীয় মেয়াদে আবারো জামায়াতের আমীর নির্বাচিত

সহযাত্রী ডেস্ক: ডা: শফিকুর রহমান আবারো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী তিন বছরের (২০২৩-২৫) জন্য তাকে আমীর হিসেবে ঘোষণা করে দলটির নির্বাচনী বোর্ড। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দলটির নির্ভরযোগ্য একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চলতি মাসের অক্টোবরে সারা দেশে জামায়াতের সদস্যরা (রুকন) গোপন ব্যালটের মাধ্যমে আমীর নির্বাচনে ভোট দেন। এ জন্য দলটির শীর্ষ নেতারা আগে থেকেই তিনজনের নাম প্রাথমিকভাবে তালিকাভুক্ত করে থাকেন। তবে দলটির নিয়মানুযায়ী কেউ নিজে প্রার্থী হতে পারেন না। ভোটাররা তালিকাভুক্ত তিনজন ছাড়াও যেকোনো সদস্যকে আমীর পদের জন্য উপযুক্ত মনে করলে ভোট দিতে পারেন। জানা যায়, গত ২৫ অক্টোবর ভোট গণনা শুরু হয়। তবে কত ভোটে ডা: শফিকুর রহমান আবার আমীর নির্বাচিত হয়েছেন তা জানা যায়নি। মাওলানা আবদুল হালিম জানিয়েছেন, দ্রুতই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমীর নির্বাচনের বিষয়টি গণমাধ্যম ও জাতিকে জানানো হবে।

জানা গেছে, শপথ গ্রহণের পর আমীর নির্বাহী পরিষদের সাথে বৈঠক করে দলের সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত করবেন। জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দী রয়েছেন।

কে এই ডা. শফিকুর রহমান?

জামায়াত সূত্রে জানা যায়, ডা: শফিকুর রহমান ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে স্থানীয় বরামচল উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৬ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৮৩ সালে সিলেট মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি তিনি রাজনীতিতে অংশ নিয়ে আর্তমানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৮৫ সালের ৫ জানুয়ারি তিনি ডা: আমেনা বেগমের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্ত্রী অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা এমপি ছিলেন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তিন সন্তানই এমবিবিএস পাস করে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

ডা: শফিকুর রহমান ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। জাসদ ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন তিনি। এরপর ১৯৭৩ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদান করেন। তিনি সিলেট মেডিক্যাল কলেজ সভাপতি ও সিলেট শহর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রজীবন শেষ করে ১৯৮৪ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পণ করেন ডা: শফিকুর রহমান। পরে তিনি সিলেট শহর, জেলা ও মহানগর আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ডা: শফিকুর রহমান কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং ২০১৬ সালে সেক্রেটারি জেনারেল নিযুক্ত হয়ে সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর ডা: শফিকুর রহমান দলটির আমীর নির্বাচিত হন।

ডা: শফিকুর রহমান রাজনীতির পাশাপাশি সমাজসেবায় অবদান রেখে যাচ্ছেন। তিনি একজন দক্ষ সংগঠক এবং সফল উদ্যোক্তাও। তিনি একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ডা: শফিকুর রহমান অনেক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একাধিক এতিমখানা, দাতব্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন মসজিদ, ক্লাব ও ছাত্রাবস্থায় স্বেচ্ছায় রক্তদাতা ক্লাব ‘পাল্সের’ প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া একাধিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করে আসছেন। তিনি সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) আজীবন সদস্য এবং সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য। তিনি পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি আরব ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নিতে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, গ্রিস, বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন।

ডা: শফিকুর রহমান রাজনীতি করতে গিয়ে ছাত্রাবস্থায় ১৯৮২ সালে কারাবরণ করেন। বর্তমান সরকারের আমলেও তিনি বারবার হামলা-মামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter