দৈনিক সহযাত্রী

শিরোনাম

আ.লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা কাল, আসছে ‘গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত’

সহযাত্রী অনলাইন ডেস্ক: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা শুক্রবার। ডিসেম্বরে দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আগে এটাই হতে পারে বর্তমান কমিটির শেষ বৈঠক।

এই সভা থেকেই আসতে পারে পরবর্তী সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। গঠন করা হতে পারে সম্মেলন প্রস্তুতির বিভিন্ন উপকমিটি।

এছাড়া সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলনের দিনক্ষণও চূড়ান্ত হতে পারে। পাশাপাশি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবিলার কৌশল এবং নিজেদের কর্মসূচি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবে।

সভায় দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি পেলে বিভাগ এবং জেলা-উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনের সার্বিক পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরবেন বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা বিভিন্ন বিষয়ে চাইবেন দিকনির্দেশনা। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবে। করোনা ও যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব দেশে কতটা পড়বে এবং সে বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেবেন দলীয় সভাপতি। পাশাপাশি নভেম্বর ও ডিসেম্বরজুড়ে আওয়ামী লীগের দিবসভিত্তিক কর্মসূচি দলে কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় চূড়ান্ত হবে। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক যুগান্তরকে বলেন, ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা। সেখানে আমাদের জাতীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণসহ নানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পরে। এছাড়া দলের যেসব সহযোগী সংগঠনের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ, সেগুলোর সম্মেলন তো করতে হবেই, সেগুলো নিয়েও আলোচনা হতে পারে। পাশাপাশি সমসাময়িক রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় আসবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচির বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি রয়েছে। আওয়ামী লীগেরও কর্মসূচি থাকবে, সেটা পালটা কর্মসূচি নয়।

আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আমাদের জাতীয় সম্মেলন নিয়ে আলোচনা হবে। সম্মেলনের প্রস্তুতি, বিভিন্ন কমিটি গঠন, গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র প্রণয়ন নিয়েও আলোচনা হবে। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখসহ অন্যান্য বিষয়গুলোও আলোচনায় আসতে পারে। একবিংশ শতাব্দীতে আমরা কেমন বাংলাদেশ চাই তা নিয়ে আলোচনা হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, সভায় সমসাময়িক রাজনীতি, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। আমাদের জাতীয় দিবসগুলোর কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া জাতীয় সম্মেলনসহ সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের বিষয়ে সবাই নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। সভায় এ বিষয়ে নেত্রীর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ফলে এ নিয়ে সারা দেশের দলীয় নেতাকর্মীসহ মানুষের মধ্যে একটা আগ্রহ ও উৎসাহ রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বৈঠকটির শুরু হবে বিকাল ৪টায়। বৈঠকে আমন্ত্রিত নেতাদের ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণভবনে উপস্থিত হতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বৈঠকে লিখিত এজেন্ডায় মূলত ১১টি বিষয় রয়েছে। এর মধ্যে আছে-শোক প্রস্তাব পাঠ, ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস, ১০ নভেম্বর শহিদ নূর হোসেন দিবস, ২৭ নভেম্বর শহিদ ডা. মিলন দিবস, ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী, ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল-২০২২, দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, সাংগঠনিক কার্যক্রম ও বিবিধ।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন-বৈঠকে জাতীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের পাশাপাশি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি, ঘোষণাপত্র, দপ্তর, প্রচার-প্রকাশনা, স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা, মঞ্চ ও সাজসজ্জা, গঠনতন্ত্র, সাংস্কৃতিক, খাদ্য ও স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি গঠন করে দিতে পারেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। সাধারণত জাতীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা মহানগর উত্তর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গতবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে একই মঞ্চে তাদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবারও আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনের বিষয়ে দলীয় সভাপতি বৈঠকে নির্দেশনা দিতে পারেন।

আওয়ামী লীগের সহযোগী বেশ কয়েকটি সংগঠন বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও ছাত্রলীগকে আগেই সম্মেলনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে এই তিন সংগঠনসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের বিষয়ে নির্দেশনা আসতে পারে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ নানা কারণে দলের বেশ কিছু নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং তৃণমূল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশও পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়টিও শুক্রবারের সভায় আলোচনায় আসতে পারে বলে দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূল সম্মেলন শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। প্রতিদিনই হচ্ছে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। চলছে কমিটি গঠনের কাজও। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা জানান, আমাদের কাছে এবার লিখিতভাবে সাংগঠনিক রিপোর্ট চাওয়া হয়নি। তবে আমরা নেত্রীকে সংগঠনের অবস্থা সম্পর্কে জানাতে চাই। আমরা কি করেছি, কি করতে পারেনি, কেন পারিনি, আগামীতে কি করতে চাই; সব বিষয় নেত্রীকে জানাতে চাই। সভায় তিনি (শেখ হাসিনা) অনুমতি দিলে এগুলো তুলে ধরব।

জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে রাজপথ। বিভাগীয় সমাবেশের মধ্য দিয়ে বড় শোডাউন দিচ্ছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ নেতারা আগেই জানিয়েছেন, তারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে এখনই সরসরি পালটাপালটি কোনো কর্মসূচিতে যেতে চান না। আপাতত নিজেদের দলীয় কর্মসূচির মধ্য দিয়েই রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে চান তারা। আগামীকালের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে দলীয় সভাপতির প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা চাইবেন নেতারা। একই সঙ্গে বিরোধীদের মোকাবিলায় দলের নেতা এবং এমপিদের ভূমিকা কী হবে-তা নিয়েও আলোচনা হবে। নির্বাচনের আগে সরকারের উন্নয়ন চিত্র সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার কৌশলের বিষয়েও নির্দেশনা দেবেন শেখ হাসিনা।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter