দৈনিক সহযাত্রী

শিরোনাম

ফখরুল সাহেব এটা আপনার মাথায় ঢুকল কেমনে: ওবায়দুল কাদের

সহযাত্রী ডেস্ক: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ক্ষমতার পরিবর্তন হলে নির্বাচনেই হতে হয়। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। তারা (বিএনপি) এখন ক্ষমতার রঙিন খোয়াব দেখছে। খোয়াব যত পারেন দেখেন। খোয়াবে দিবাস্বপ্ন কতজনই তো দেখে। দেখেন খোয়াব তাতে কিছু আসে যায় না।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন- তত্ত্বাবধায়ক নাকি পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ বুঝে না। তাহলে ফখরুল সাহেব এটা আপনার মাথায় ঢুকল কেমনে।

শনিবার বিকালে গাজীপুর শহরের ঐতিহাসিক ভাওয়াল রাজবাড়ী মাঠে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুয়াত্তকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল তার আপনজন, কিন্তু তিন মাসও তারা ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। বাংলাদেশে খুনি মোশতাক বঙ্গবন্ধুকে খুন করে তিন মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। এটাই হচ্ছে ইতিহাস। অবলা নারী, অবুঝ শিশুকে হত্যা করেছে খুনিরা, সেই খুনিদের জিয়াউর রহমান পুরস্কৃত করে বিদেশে দূতাবাসে চাকরি দিয়েছে। খন্দকার মোশতাকের ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে পঞ্চম সংশোধনীতে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করেছে এই জিয়াউর রহমান। যে খুন করে, আর যে খুনের মদত দেয় সেকি একই অপরাধে অপরাধী নয়?

তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হচ্ছে সেনাপতি জিয়াউর রহমান। ইতিহাসের এ সত্যকে অস্বীকার করা যাবে না। শেখ হাসিনা আমাদের স্বপ্নের ঠিকানা, আমাদের পূর্বপৃতির সূর্য, আমাদের সাহসের বর্ণিল ঠিকানা, বাংলাদেশের রূপান্তরের রূপকার, শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য হাওয়া ভবন থেকে মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমানের মদত কি আপনারা ভুলে গেছেন?

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৫ আগস্ট আর ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্ত করেছে তারা। আল্লাহ যারে বাঁচায়, বান্দায় কি সেটা পারে? মারতে পারে নাই। শেখ হাসিনা ২০ বার মৃত্যু এবং এটেম টু মার্ডারের মোকাবিলা করে আজ ১৪ বছর একাধারে ক্ষমতায়। কোন জাদুগুণে? ম্যাজিকেল লির্ডারশিপ, শেখ হাসিনা সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন উন্নয়ন কাকে বলে। সর্বশেষ বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট বলে গেছেন বাংলাদেশের অসাধারণ উন্নয়ন, সারা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপির মনে বড় জ্বালা, মির্জা ফখরুলের বুকের ব্যথা, কালো চশমা পরে কিছুই দেখতে পান না। হায়রে জ্বালা, পদ্মা সেতু- সেতু তো হয়েই গেল নিজের টাকায়। শেখ হাসিনা নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করে ফেললেন। চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র টানেল, বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত, প্রস্তুত ঢাকার তরুণ প্রজন্মের ড্রিম প্রজেক্ট মেট্রোরেল, কী জ্বালা, কত ফোর লেন, এখান থেকে এলেঙ্গা ফোর লেন উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত। একদিনে একশ সেতু উদ্বোধন করেছেন শেখ হাসিনা। সারা বিশ্ব অবাক হয়েছে। সারা দেশ অবাক হয়েছে। একদিনে একশ সেতু কি দেখেন নাই? এক দিনে শেখ হাসিনার উন্নয়ন কিন্তু ফখরুল দেখেন না। দিনের আলোতে অমাবস্যার অন্ধকার দেখেন। দিনের আলোতে পূর্ণিমার রাতে যে আলো জ্বলমল, সেটা দেখতে পান না। চোখও ওদের খারাপ হয়ে গেছে।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, খালি বলে জনতার ঢল। আরে কী ঢল দেখছো। ফখরুল ভাই জনতার ঢল গাজীপুরে দেখাব। ঢল কাকে বলে। গাজীপুরের এই সদর দপ্তরে এসে দেখেন কোনো দিকে যাওয়া যায় না। গাড়ি নিয়ে ঢোকা যায় না। এখানে যা লোক এর থেকে ৪ গুণ লোক আছে বাইরে। সিলেটে ঢল নেই। আছে সুরমা নদীর ঢল, আর এখানে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গ।

তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) বলে- তাড়াতাড়ি ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে প্রস্থান নিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এত কিছু করেছেন, গোটা দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়েছেন। আজকে তাকে বলে পদত্যাগ করো। ফখরুল সাহেব, শেখ হাসিনা দয়া করে আপনাদের নেত্রীকে বাসায় থাকতে দিয়েছেন। দণ্ডিত আসামিকে, লজ্জা করে না?

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, গণঅভ্যুত্থান করবেন? এই নেত্রীর জন্য একটা মিছিলও করতে পারেননি। দেশনেত্রী বলতে বলতে আপনাদের মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়। সেই দেশনেত্রীর জন্য একটা মিছিল পর্যন্ত করতে পারেননি। দেখতে দেখতে ১৩ বছর। আমরা বলেছিলাম, আন্দোলন হবে কোন বছর? দেখতে দেখতে ১৩ বছর! মানুষ বাঁচে কয় বছর! কি ঠিক আছে না? খেলা হবে, খেলা হবে, গাজীপুরবাসী প্রস্তুত হয়ে যান। ভোট চুরির বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, লোটপাটের বিরুদ্ধে, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে। খেলা হবে, প্রস্তুত হয়ে যান গাজীপুর।

তিনি বলেন, গাজীপুরের নেতাকর্মীরা ব্যানার ফেস্টুন নামান, পরে সাংবাদিকরা বলবে ছবি পাচ্ছি না। ছবিটা দেখুক সবাই। ফখরুলকেও বলছি একটু দেখুন, টেলিভিশনের পর্দায় দেখুন। সিলেটের সঙ্গে গাজীপুরকে মিলিয়ে দেখুন। এখানে মহানগর আওয়ামী লীগ, ঠিক না? জেলা তো এখানে নাই। আর ওখানে (সিলেটে) ৫ জেলা। কেউ কেউ ৩ দিন আগে থেকে ঢল নামাইছে। কাথা-বালিশ, বিছানা-পত্র, হান্ডি-পাতিল সব নিয়া, নেতাকর্মীরা সারা দেশ থেকে সিলেটে গেছে। যেখানে সমাবেশ সেখানে ৭ দিন আগে থেকে রওনা হয়। কি বুঝছেন না। খানা-পিনা ভালোই চলছে। পাতিলে পাতিলে খাবার, গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগির মাংস, মাছের টুকরা আর কত বলব! এরপরে পেপসি কোলা অথবা কোকাকোলা। এ হলো খাবারের ম্যানু। ভালোই আছে বিএনপি, ক্ষমতা না থাকলে কী হবে? এখনো তারা ক্ষমতার রঙিন খোয়াব দেখছে। তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ক্ষমতার পরিবর্তন হলে নির্বাচনেই হতে হবে।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিদেশির কাছে নালিশ করেন। বিএনপি হচ্ছে বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। বিদেশিদের জিজ্ঞাসা করুন কোন দেশে তত্ত্বাবধায়ক আছে। দুনিয়ার অন্যান্য দেশে যেভাবে ইলেকশন হয় বাংলাদেশেও সেভাবেই ইলেকশন হবে। শেখ হাসিনা কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। আমি নেত্রীর পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়ে গেলাম।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য দেন- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবীর কাওছার, আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী ও ইকবাল হোসেন অপু এমপি, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসি এমপি প্রমুখ।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter