সহযাত্রী ডেস্ক: দীর্ঘ ছয় বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন প্যানেল ও সংগঠন প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে।
প্রকাশিত প্রাথমিক বৈধ প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী এবারের কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মোট ৪৬২ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদেই প্রার্থী হয়েছেন সর্বাধিক ৪৮ জন। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী তাদের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছেন মাদ্রাসায়।
শুধু ভিপি পদেই নয়, কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রার্থী রয়েছেন যারা অতীতে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। বিশ্লেষকদের মতে, ডাকসুর ইতিহাসে এবারই প্রথম এত বিপুল সংখ্যক মাদ্রাসাশিক্ষিত শিক্ষার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, যা ছাত্ররাজনীতির প্রচলিত ধারা থেকে এক নতুন বাস্তবতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আলোচনায় মাদ্রাসা পটভূমির প্রার্থীরা
ভিপি পদে মাদ্রাসা শিক্ষার পটভূমি থেকে আসা আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন—
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান
ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’-এর প্রার্থী ও শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক মো. আবু সাদিক কায়েম
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের
স্বতন্ত্র প্যানেল ‘ডিইউ ফার্স্ট’-এর প্রার্থী জামালুদ্দীন খালিদ
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আবদুল ওয়াহেদ
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত
এর মধ্যে আবিদুল ইসলাম খান ও আবু সাদিক কায়েমকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে। শিক্ষার্থীদের মতে, জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে তাদের সক্রিয় ভূমিকা জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী জামালুদ্দীন খালিদও ছাত্রসমাজে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন।
প্রার্থীদের অভিমত
প্রার্থীরা জানিয়েছেন, অতীতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা পরিচয়ের কারণে নানা বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হতেন। তবে এবার পরিস্থিতি বদলেছে।
আবু সাদিক কায়েমের ভাষায়, “জুলাই বিপ্লবের পর পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি বিলুপ্ত হয়েছে, এখন ডাকসু সব শিক্ষার্থীর প্ল্যাটফর্ম।”
আব্দুল কাদের বলেন, “এক সময় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বাড়তি নির্যাতনের শিকার হতে হতো। কিন্তু এবার পরিস্থিতি পরিবর্তিত।”
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্রার্থী ইয়াসিন আরাফাত মনে করেন, এই অংশগ্রহণ আগামীর বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব কাঠামোয় নতুন বার্তা দিচ্ছে।
অন্যদিকে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, “মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নতুন কিছু নয়। পার্থক্য হলো, আগে ভয়ের কারণে তারা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতেন না, এখন তা খোলাখুলিভাবে করছেন।”
নির্বাচন প্রক্রিয়া
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী—
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময়: ২৫ আগস্ট দুপুর ১টা পর্যন্ত
প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ: ২৬ আগস্ট বিকেল ৪টা
ভোট গ্রহণ: ৯ সেপ্টেম্বর (সেদিনই ফলাফল ঘোষণা)
প্রথমবারের মতো হলে বাইরে ৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯,৭৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২০,৮৭১ জন এবং ছাত্রী ১৮,৯০২ জন।