সহযাত্রী ডেস্ক: বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে ঢাকায় এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। সোমবার ( ৯ ডিসেম্বর) সকালে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে তিনি ঢাকায় পৌঁছান। দুই দেশর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটিই হবে বাংলাদেশ ও ভারতের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রথম বৈঠক।
সফরসূচি অনুযায়ী, বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার আগে একান্তে বৈঠক করবেন। সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ শেষে যোগ দেবেন মধ্যাহ্নভোজে। এরপর তিনি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
আজ রাতেই বিক্রম মিশ্রির দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বৈঠকে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও বাংলাদেশ তিনটি বিষয়ের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে। সেগুলো হলো- ভারতে বসে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সক্রিয়তা বন্ধ, ভারতীয় গণমাধ্যমের বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার প্রতিরোধ এবং ভিসার জট খোলা।
অন্যদিকে, দিল্লি সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তোলার পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের স্বার্থ এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আর্জি জানাতে পারে।
রোববার ঢাকায় এক সেমিনারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের এটা স্বীকার করতে হবে যে ৫ আগস্টের আগে এবং পরে সম্পর্কের নিশ্চয়ই গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। এটা মেনে নিয়ে আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আমি আশা করবো, তারা ফলপ্রসূ আলোচনা করবেন।’
গত শুক্রবার দিল্লিতে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ বৈঠকের ব্যাপারে কথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ঢাকা সফর করবেন। সেখানে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পারস্পরিক স্বার্থ–সম্পর্কিত নানা বিষয় নিয়ে কথা বলবেন।
ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে গত ৫ আগস্ট থেকে যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে, তা নজিরবিহীন। এর সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগে আগরতলার মিশনে হামলা এবং কলকাতা ও মুম্বাইয়ের বাংলাদেশ মিশনের সামনে বিক্ষোভ। তবে নানা তিক্ততার পরও এ বৈঠক হওয়াটাকে ইতিবাচক মনে করছে বাংলাদেশ।
ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কের নানা টানাপোড়েনের জেরে এর আগে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক স্থগিত হয়েছে। ১৮–২০ নভেম্বর দিল্লিতে বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল। তবে গত অক্টোবর ও নভেম্বরে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে পানিবণ্টন, স্থলসীমান্ত ও স্থলবন্দরের বিষয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে তিনটি বৈঠক হয়েছে। এর মধ্যে অক্টোবরে ঢাকায় যৌথ নদী কমিশনের সদস্যরা গঙ্গার পানিপ্রবাহ নিয়ে কারিগরি বৈঠক করেন। নভেম্বরে কলকাতায় স্থল সীমান্তবিষয়ক নিরাপত্তা কমিটি এবং একই মাসে স্থল বন্দরবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের কর্মকর্তারা বৈঠক করেন দিল্লিতে।