সহযাত্রী ডেস্ক: দ্বীন কায়েমের পথ কখনোই ফুল বিছানো ছিল না; বরং যুগে যুগে বন্ধুর ও কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়েই ইসলামের সৈনিকরা দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দিয়ে গেছেন। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ওপর বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে জুলুম-নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। এসব উপেক্ষা করে সমাজে-রাষ্ট্রে ইসলামী বিধিবিধান প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই মানবতার প্রকৃত মুক্তি নিশ্চিত করা যাবে।
জিয়ানগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রানিবাড়ি চাঁদপুর পাঠাগার ও সমাজকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ৩দিন ব্যাপি ২৬তম তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের শেষ দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
পিরোজপুর-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী মাসুদ সাঈদী বলেন, আল্লাহ সরাসরি যে সকল মহামানবকে ইসলামের কাজের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন সে সকল নবী-রাসুলগণও ইসলামের জন্য কাজ করতে গিয়ে শত্রুদের জুলুম-নির্যাতনের নির্মম শিকার হয়েছেন। শতভাগ নিষ্পাপ ও নির্মোহ এ মানুষগুলোকেও দৈহিক নির্যাতন করা হয়েছে, সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছে। তাদের অনেককেই জানে মেরে ফেলা হয়েছে। ইসলামের জন্য নবীদের ত্যাগ ও কুরবানীর অসংখ্যা দৃষ্টান্ত মহাগ্রন্থ কুরআনে রয়েছে। অতীতের সকল ইসলাম বিরোধীদের ইসলাম নির্মূলের ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় জালিম স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা তার পূর্বসুরীদের পদাংক অনুসরণ করে বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত দল জামায়াতে ইসলামী ও তাদের নেতৃবৃন্দের উপর অত্যাচার নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে। জেল দিয়েছে, ফাসি দিয়েছে। কোরআনের পাখি বিশ্বনন্দিত মুফাসসির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে খুনি হাসিনার নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
মাওলানা মো: আব্দুল বাসিরের সভাপতিত্বে ও অধ্যাপক মাওলানা হামিদুজ্জমান ও ইসলমাী ব্যাংক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের সঞ্চালনায় মাহফিলে তাফসীর পেশ করেন দেশবরেণ্য আলেমে দ্বীন যশোরের মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক অধ্যাপক মাওলানা তৈয়েবুর রহমান। মাহফিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের আমীর শিবগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ড. মাওলানা কেরামত আলী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদ সাঈদী বলেন, ইসলামে সব ধরনের জুলুম অত্যাচার নির্যাতন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম। শুধু জুলুম নয়, জুলুমের সহযোগিতা করা এবং জালিমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম। এ বিধান শুধু মুসলমান নয়, কোন অমুসলিমের উপর জুলুম করলেও তার জন্য একই হুকুম।
কাউকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, মিথ্যা স্বাক্ষ্য, মিথ্যা রায়, মিথ্যা সাজা, কারো অধিকার হরণ, বিনা অপরাধে নির্যাতন, আর্থিক, শারিরীক কিংবা মানসিক ক্ষতিসাধন, মানহানিকর অপবাদ, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ দখল ইত্যাদি সব কাজই জুলুম।
মাসুদ সাঈদী বলেন, জুলুম কঠিন গুনাহের কাজ। মানবতার বিচারে জুলুম এতই অপছন্দনীয় যে, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নিজের জন্যও এটি হারাম করেছেন। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একজন অন্যজনের ওপর জুলুম করো না।’
আল্লাহ জালিমকে ছাড় দেন; কিন্তু ছেড়ে দেন না। জালিমকে তার জুলুমের শাস্তি অবশ্যই ভোগ করতে হবে। যারা জুলুম করে এমন কাউকে মহান আল্লাহ অতীতে ছেড়ে দেননি, তার শেকড় যতই শক্ত হোক। ফেরাউন ও নমরুদ তাদের শক্তির দাম্ভিকতায় নিজেদের রব বলে দাবি করেছে। স্বীয় ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য এবং তার পথের কাঁটা সরিয়ে দেওয়ার জন্য দেশের সব নবজাতক ছেলেসন্তানদের হত্যা করেছে। তারা নিজেদেরকে সর্ব ক্ষমতার অধিকারী ভেবেছিল। ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিল। জুলুম করেছিল। কিন্তু এতকিছুর পরও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি।
শেখ হাসিনাকে বাংলার নমরুদ উল্লেখ করে মাসুদ সাঈদী আরো বলেন, বাংলাদেশের নমরুদ শেখ হাসিনাও একই ভাবে তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য দেশের ছাত্র যুবক বৃদ্ধ সকলকে গণহারে হত্যা করেছে। শত সহস্র মানুষকে গুম করেছে। হাজারো মানুষকে চিরতরে পঙ্গু করেছে দেশের অর্থনীতির ভীতকে ভেঙ্গে দিয়েছে। ব্যাংকের টাকা বোন ছেলে মেয়ে মিলে লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার গুম খুন নির্যাতন বিশ্বের সব স্বৈরশাসককে হার মানিয়েছে। বিশ্বের সব স্বৈরশাসকের মধ্যে শেখ হাসিনা ছিলেন জঘন্যতম জুলুমবাজ। ফ্যাসিস্ট হাসিনার জুলুম-অত্যাচারের প্রতিবাদ করলেই তাকে গুম করে আয়নাঘরে বন্দী করে রাখা হতো। হাসিনার মাফিয়া সরকার যে পরিমাণ অত্যাচার-নিপীড়ন করেছে তা এ দেশের মানুষ ভুলতে পারবে না। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের পলাতকদের অবিলম্বে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে। সেই সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দিতে হবে।
তাফসীর মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদ সাঈদী আরো বলেন, গণতন্ত্র ও জনগণের সার্বভৌমত্বের নামে দীর্ঘ ৫০ বছর যাবৎ দলীয় নেতাদের সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্ব চলছে। মানুষের মনগড়া সংবিধানের ভিত্তিতে নেতৃত্ব দানকারী নেতাদের নেতৃত্ব চলছে। যার কারণে মানুষ সুশাসন ও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, উগ্রতা, জঙ্গীতৎপরতা, গুম-খুন, ধর্ষণ ও মাদক ইত্যাদি মানবতা বিরোধী অপরাধের সয়লাবে জাতীয় জীবনে চরম দুর্ভোগ ও অশান্তি চলছে।
জনগণের জান মাল ও সম্পদ একমাত্র ইসলামী সরকারের কাছেই নিরাপদ উল্লেখ করে মাসুদ সাঈদী বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করলে জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন হবে না, আমাদের নারীরা আর ধর্ষণের শিকার হবেন না এবং অবৈধভাবে সম্পদ বিদেশে পাচার হবে না। মানুষ তার হারানো অধিকার ফিরে পাবে। সেই লক্ষ্যে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করে দেশে সুশাসন ও সুষম অর্থ বণ্টনের মাধ্যমে সবাইকে প্রতিষ্ঠিত করা হবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের আমীর শিবগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ড. মাওলানা কেরামত আলী বলেন, সমাজ এবং রাষ্ট্রে ইসলাম ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকল ইসলামী দল ও সমমনা চিন্তা-চেতনার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হলে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে তাঁরই আইন-বিধানের ভিত্তিতে ইসলামী সমাজ গঠনের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আন্দোলনের পথে সকল প্রকার বিরোধিতার মোকাবিলার দায়িত্ব আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়ে সবর ও ক্ষমার নীতিতে দৃঢ় থেকে আল্লাহর ওপর পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
মাহফিলে আরো বক্তব্য রাখেন চককীর্তি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা শাহ আলম, যাদবপুর দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা একরামুল হক, মাওলানা হাসান আল মামুন, মাওলানা ইয়াসিন আলী, হাফেজ মাওলানা আকজারুল ইসলাম প্রমুখ।