সহযাত্রী ডেস্ক: দুর্নীতি বাংলাদেশের বড় সমস্যা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী নেতাদের বরাত দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেক সুবিধা রয়েছে, যা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয়। তবে তারা সেই দেশে বিনিয়োগ করবে, যেখানে দুর্নীতির স্তর কম হবে, আমলাতান্ত্রিক বাধা কম, আইনের শাসনের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান এবং তাদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে অবকাঠামোগত সুযোগ থাকবে।’
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’ শীর্ষক এক সম্মেলনে এ কথা বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
পিটার হাস বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে পারে যে অন্য বাজারের তুলনায় এখানে দুর্নীতি কম, তাহলে তা আরও বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে। আর এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘দুর্নীতি দূর করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুর্নীতি দূর করতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদি দুর্নীতি দূর করা যায় বাংলাদেশিরা যেমন মর্যাদা উপভোগ করতে পারবেন, তেমনি আরও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে সক্ষম হবে।’
দুর্নীতির প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পিটার হাস আর বলেন, ‘বিশ্বের প্রতিটি কোণায় দুর্নীতি রয়েছে। এটি একেক জায়গায় একেকভাবে বিদ্যমান। এখানে চালকের লাইসেন্স পেতে স্পিড মানি দিতে হচ্ছে। পাসপোর্ট অ্যাপয়েন্টমেন্ট চান? আপনার অতিরিক্ত খরচ হবে। আপনার কেনা জমির প্লট রেজিস্ট্রি করার জন্য কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে হচ্ছে।’
এসময় যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া দুর্নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, ‘দুঃখের বিষয়, আমার নিজের দেশেই কিছু বড় দুর্নীতি কেলেঙ্কারি ঘটেছে। আমার নিজের দেশে কিছু কুখ্যাত কেলেঙ্কারি ঘটেছে। তথাপি দুর্নীতির বহিঃপ্রকাশ এবং অপরাধীদের জবাবদিহিতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে অনুঘটক করেছে।’
দুর্নীতি প্রতিরোধে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতার কথা তুলে ধরেন পিটার হাস। তিনি জানান, ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) নতুন ব্যবসার জন্য একটি অনলাইন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করতে বাংলাদেশের রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে। এটি নতুন ব্যবসা নিবন্ধনকে আরও স্বচ্ছ, দ্রুত এবং আরও সাশ্রয়ী করে তুলবে।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ইউএসএআইডি অনুমোদিত অর্থনৈতিক অপারেটর প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গেও কাজ করেছে। এ প্রচেষ্টা বন্দরে চালান ছাড়ার জন্য সরকারের পরিবর্তে বেসরকারি খাতকে ক্ষমতায়ন করে। ফলে প্রক্রিয়াটি আরও স্বচ্ছ হয়েছে এবং বেসরকারি খাত ও সরকারের মধ্যে আস্থার মাত্রা বাড়িয়েছে।’
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘মার্কিন বিচার বিভাগ দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তকারী এবং আইনজীবীদেরকে কীভাবে অর্থ পাচারের তদন্ত ও বিচার করতে হয়, কীভাবে ইলেকট্রনিক প্রমাণ ব্যবহার করতে হয় এবং কীভাবে আর্থিক অপরাধের তদন্ত করতে হয় সেগুলোর বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। এটি বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট এবং আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন সমন্বয় কেন্দ্রের মধ্যে একটি সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।’