বিশেষ প্রতিবেদন: মালয়েশিয়ায় সাম্প্রতিক নির্বাচনে দেশের প্রধান ইসলামী দল পার্টি ‘ইসলাম সে মালয়েশিয়া’ (পাস) বিস্ময়কর সাফল্য লাভ করেছে। বৃহৎ দলগুলো প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম আসন পেলেও পাস এককভাবে সবচেয়ে বেশি আসন লাভ করেছে। এবারের নির্বাচনে তারা ৪৯টি আসনে জয় লাভ করেছে।
একটি কলাম পড়ছিলাম। সেখানে বিশ্লেষক দাবি করেছেন জাতীয় পর্যায়ে পাসের এই উত্থান বিস্ময়কর। আর এর মাধ্যমে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের দল এবং তার মালয় জাতীয়তাবাদী দর্শন। মালয়েশিয়ায় ইসলামী দলের এই সাফল্য দেশটিতে নতুন এক মেরুকরণের জন্ম দেবে বলেই তিনি ধারনা করছেন।
এই নির্বাচনের আগে, পাস মূলত উত্তরাঞ্চলীয় নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গরাজ্য যেমন তেরেঙ্গানু, কেলানতান, পারলিস এবং কেদাহতে শক্তিশালী অবস্থায় ছিল। নির্বাচনের আগে কেউই আশা করেনি যে, পাস এককভাবে পার্লামেন্টের মোট আসনের ১০ শতাংশের বেশি আসন পাবে। এর আগে পাস সর্বোচ্চ ১৮ থেকে ২৩টি আসনে জয় পেয়েছিল। কিন্তু এবার ৪৯টি আসনে জিতে তারা সকল মহলকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিদ্যমান ভোটারদের বড়ো একটি অংশ পাসের ওপর এবার আস্থা রেখেছে। পাশাপাশি, যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তারাও এতদিন ধরে চলে আসা বড়ো দলগুলোর বাইরে নতুন কোনো দলের ওপর আস্থা রাখতে চেয়েছেন।
উদাহরণ হিসেবে পেনাং রাজ্যের কথা বলা যায়। এই প্রদেশে তুলনামূলক লিবারেল মানসিকতার প্রার্থীরাই জয় লাভ করেন। সেখানকার মূখ্যমন্ত্রীও চীনা নৃতাত্তিক গোষ্ঠীর। অথচ এই পেনাং প্রদেশেও পাস এবার প্রথমবারের মতো দুটো আসনে জয় পেয়েছে। তার চেয়েও বড়ো কথা, নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার ইবরাহীম, তার স্ত্রী এবং তার মেয়ে নুরুল ইজ্জাহ আনোয়ারের স্থায়ী বা পারিবারিক আসন বলতে যে সিটটিকে বোঝানো হয়, সেই পেরমাতাং পুয়াহ সিটেও পাস এর প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, পাসের এই বিজয় ইংগিত দিচ্ছে, ইসলামী দলভিত্তিক রাজনীতি মালয়েশিয়ার মূলধারার রাজনীতিতে পরিণত হতে যাচ্ছে।
পাসের বিরুদ্ধেও নানা মহলের তৎপরতা রয়েছে। পাসের মন্ত্রীদের বিষয়ে নানা আপত্তিও রয়েছে। পাস বিরোধীরা মনে করেন, পাস থেকে কেন্দ্রীয় সরকারে মন্ত্রী হলে দেশটিতে বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেও আসতে পারে। তবে এবার পাস যে ধরনের রেজাল্ট করেছে তাতে পাসকে এড়িয়ে কিছু করা যেকোনো সরকারের জন্যই কঠিন হবে। অনেকেই মনে করছেন, পাস যদি সরকারে যোগ দেয় তাহলে তারা শিক্ষামন্ত্রীসহ গুরুত্বপূ্র্ন কিছু মন্ত্রনালয় চাইতে পারে। কারণ পাস বরাবরই পরবর্তী প্রজন্মের মনন পরিবর্তন নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী।
এক্ষেত্রে পাসের প্রধান উস্তাদ আব্দুল হাদি আওয়াংকে নিয়ে কিছু তথ্য দিতেই হয়। আব্দুল হাদি আওয়াং এর জন্ম ১৯৪৭ সালে এবং বর্তমানে তার বয়স ৭৫ বছর। তিনি মারাং সংসদীয় আসনে ১৯৯০ সাল থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছেন এবং এবারও বিজয়ী হয়েছেন। মাহাথির পরবর্তী দুই প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিন ইয়াসীন এবং ইসমাইল সাবরির আমলে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের বাইরেও তিনি গুরুত্বপূর্ন নানা ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলারস এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।